বাবুল সুপ্রিয়র মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক। —ফাইল চিত্র
সোশ্যাল মিডিয়ায় বেসামাল মন্তব্য ঘিরে বিতর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। দিলীপ ঘোষ এবং বাবুল সুপ্রিয়র শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাবুলেরই একটি পোস্টের নীচে মন্তব্য করেন এক কলেজ ছাত্র। জবাবে বাবুল ওই পড়ুয়াকে ‘দেশে ফেরত’ পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেন। তাতেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। আরও অনেকের পাশাপাশি সিপিএমের তরুণ নেতা শতরূপ ঘোষ ওই পোস্টের কমেন্ট ট্রেলেই পাল্টা আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। তবে শতরূপ যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তা আবার অত্যন্ত আপত্তিকর ঠেকেছে বাবুলের কাছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাগ্যুদ্ধ।
কয়েক দিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে দেবস্মিতা চৌধুরী নামে এক ছাত্রী ডিগ্রি নেওয়ার পরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান। সেই ঘটনার নিন্দা করে এবং পরিবারের কাছ থেকে এই পড়ুয়ারা কী ধরনের শিক্ষা পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সঞ্জয় সোম নামে এক জন ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেই পোস্টটির প্রশংসা করে নিজের ওয়ালে সেটি শেয়ার করেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
স্বাভাবিক ভাবেই বাবুলের পোস্টের সমর্থনে এবং বিরোধিতায় নানা মন্তব্য আসতে থাকে কমেন্ট ট্রেলে। বেশ কয়েকটি আক্রমণাত্মক মন্তব্যের জবাবও দেন বাবুল। বিতর্ক শুরু হয় মুস্তাফিউর রহমান নামে এক তরুণকে তাঁর দেওয়া জবাব ঘিরে।
ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া পরিচিতি অনুযায়ী মুস্তাফিফউর কলেজ পড়ুয়া। তিনি বাবুল সুপ্রিয়র পোস্টের নীচে লেখেন, ‘‘বাবুলদা আপনি কতটা শিক্ষিত আর আপনার গুরু দিলীপ কত শিক্ষিত, যে কি না গরু থেকে সোনা বার করে।’’ জবাবে বাবুল সুপ্রিয় লেখেন, ‘‘আগে তোমায় তোমার দেশে ফেরত পাঠাই, তার পর পোস্টকার্ডে জবাব দেব।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়। কারও নাম বা তাঁর ধর্মীয় পরিচয় দেখেই কী ভাবে তাঁকে অন্য দেশের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়? শুধু নামটা দেখেই দেশের এক জন মন্ত্রী কী করে এক জনকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন? এই প্রশ্ন তুলে তুলে ধুন্ধুমার শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাবুল সুপ্রিয় অত্যন্ত গর্হিত কাজ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠতে থাকে।
এই তুমুল বিতণ্ডায় অন্য মাত্রা যোগ হয় সিপিএমের তরুণ নেতা শতরূপ ঘোষ যখন বাবুলকে আক্রমণ করেন। মন্ত্রীকে শতরূপ লেখেন, ‘‘বাবুলদা, এটাই ওর দেশ। ও এই দেশেই থাকবে। কারও বাবার ক্ষমতা থাকলে ওকে বার করে দেখাক।’’
তরুণ সিপিএম নেতার এই মন্তব্যকে মোটেই ভাল ভাবে নেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শতরূপের মন্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর— অভিযোগ তাঁর। তিনি টুইটও করেন শতরূপের মন্তব্যের নিন্দা করে। লেখেন, ‘‘বড্ড বড় বড় কথা বলছ শতরূপ ঘোষ... সেটাও মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে ‘বিলো দ্য বেল্ট’ আক্রমণও করছ! তোমাকে এখনও আমি কোনও জবাব দিইনি, দেবও না।’’ এর পরের লাইনে শতরূপের উদ্দেশে একটি উর্দু পঙ্ক্তি— ‘‘দুশমনি করো অউর জমকে করো/ পর ইতনি গুঞ্জায়িশ ছোড় দো/ কে আঁখ মিলে তো কহিঁ শরমিন্দা না হোনা পড়ে।’’ অর্থাৎ— শত্রুতা কর এবং জমিয়ে কর/ কিন্তু এইটুকু অবকাশ রেখে দিও, যাতে চোখে চোখ পড়লে কখনও লজ্জিত হতে না হয়।’’ টুইটের শেষ লাইনে বাবুল লিখেছেন, ‘ভাল থেকো’।