ক্ষয়: মৈনাক অতিথি নিবাসের একাংশের অবস্থা এখন এমন। নিজস্ব চিত্র।
রেস্তরাঁয় ‘লুকোচুরি’ খেলছে ইঁদুর। কয়েক বছর আগে সংস্কার করা ঘরের দেওয়ালে চুইয়ে আসা জলের কালচে ছোপ। স্যাঁতসেঁতে ভাব। মূল ভবনের পিছনে লোহা বার করা ভাঙা অংশ বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। টিনের ছাদ দেওয়া তৃতীয় তলার কাজ পুরোপুরি বন্ধ। পায়রা বাসা করেছে টিনের আনাচে কানাচে। সামনের অংশের রঙ রোদে পুড়ে গেলেও, নতুন প্রলেপ নেই। অথচ, শিলিগুড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্র, হিলকার্ট রোডের উপরে পর্যটন দফতরের মৈনাক অতিথি নিবাসে রাজ্যের মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের বিচারপতি থেকে অনেক ‘ভিআইপি’-রই গন্তব্য। এখন তো এখানে সাধারণ পর্যটকেরাও অনলাইনে ঘর ভাড়া নিয়ে এসে থাকতে পারেন।
পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আশ্বাসই দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বছরের মাঝে মৈনাকের চেহারা বদল হবে আশা করছি। অনেক কাজ করানো হচ্ছে। আর আমূল ভোলবদলের প্রকল্প অনুমোদনের স্তরে রয়েছে।’’
বাম আমলে জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ‘মৈনাক’-এর জন্ম। প্রশাসন সূত্রের খবর, জমি, একাধিক ভবন মিলিয়ে বিরাট এই এলাকাটি প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালীন মৈনাকের ভোলবদলের প্রকল্প-রিপোর্ট তৈরি হয়। ২০১৪-১৫ সালে ঘরের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল।
তখন কাচে ঘেরা ব্যাঙ্কোয়েট হল তৈরি হয়। পাশে আর একটি অনুষ্ঠানের বড় হল, রান্নাঘর গড়া হয়। আবাসটির ঘরেরও সংস্কার করা হয়। ঘরের সংখ্যা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৬৬ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। রান্নাঘরের দায়িত্ব নতুন সংস্থাকে দেওয়া হয়। মৈনাক-সহ রাজ্যের মোট ২৫টি অতিথি নিবাসের সংস্কারের জন্য ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি হয়। কিন্তু অর্থ দফতরের ছাড়পত্র মেলেনি। প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘পুরোটাই পর্যটন দফতরের বিষয়।’’
পর্যটন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, শিলিগুড়ির মতো শহরে পার্কিংয়ের বন্দোবস্ত-সহ এমন অতিথি নিবাস নেই বললেই চলে। পাশেই একটি তারকা খচিত হোটেল রমরমিয়ে চলছে। কিন্তু মৈনাকের ‘দশা’ দেখে খারাপ লাগে তাঁদের। পর্যটনমন্ত্রী বাবুল অবশ্য জানান, মৈনাক অতিথি নিবাসের পানশালা এবং অনুষ্ঠান হলের রান্নাঘর সংস্কার হচ্ছে। সামনে বাগানের নতুন করে সাজানোর বরাত দিতে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সদর দরজা, আলো এবং নিকাশির আরও কিছু কাজ হওয়ার কথা রয়েছে।