গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে ছেলেকে বাঁচানোর আর্তি জানিয়েছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত মা। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়েই পাশে দাঁড়ালেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। চিন্তিত মাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘‘চিন্তা করবেন না মাসিমা। আমি কোনও ক্ষতি করব না আপনার ছেলের।’’ বাবুলের এমন মন্তব্য যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে নেটিজেনদের কাছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা ধরে ঘেরাও হয়ে থাকতে হয় বাবুল সুপ্রিয়কে। নিগৃহীতও হন তিনি। শেষে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে রাজভবনে নিয়ে আসেন। রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হেনস্থার ছবি যখন গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে একটি অন্য ছবি। তাতে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সামনে মারমুখী এক যুবক। জানা যায়, তাঁর নাম দেবাঞ্জন বল্লভ। তিনি বর্ধমানের বাসিন্দা।
সংবাদমাধ্যমে ছেলের এই ছবি দেখার পর থেকেই আতঙ্ক চেপে বসে বর্ধমানের বল্লভ পরিবারের উপর। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে যায় গোটা পরিবার। ক্যানসার আক্রান্ত দেবাঞ্জনের মা রূপালি বল্লভ। সেই যন্ত্রণা ছাপিয়ে ছেলেকে নিয়েই তাঁর যাবতীয় আশঙ্কা এবং দুশ্চিন্তা ভিড় করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাবুলের কাছেই ছেলেকে বাঁচানোর আর্জি জানান রূপালি বল্লভ। একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম ছেলে কেরিয়ার নিয়ে থাকুক। কিন্তু কী করে কী হল জানি না। ছেলে কোনও ভুল করে থাকলে বাবুল সুপ্রিয় তাকে ভাইপো হিসাবে ক্ষমা করে দিন।’’
আরও পড়ুন: উপাচার্যকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে রাজ্যপালের প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শিক্ষামন্ত্রীর
এক ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের এই আর্জি পৌঁছে যায় বাবুল সুপ্রিয়র কাছে। বর্ধমানের রূপালি বল্লভের আবেদনে সাড়া দেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ। সমস্ত বিতর্ককে দূরে সরিয়েই এগিয়ে আসেন তিনি। একই সঙ্গে রূপালি বল্লভের সুস্থতাও কামনা করেন। শনিবার ফেসবুকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘চিন্তা করবেন না মাসিমা, আমি কোনও ক্ষতি করব না আপনার ছেলের! ওর ভুল থেকে ও শিক্ষা নিক এটাই চাই! আমি নিজে কারও বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর তো করিইনি, কাউকে করতেও দিইনি। আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না। তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন মাসিমা! আমার প্রণাম নেবেন।’’
রূপালি দেবীর ভিডিয়োবার্তা নিয়ে প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন বাবুল। তিনি বলেন, ‘‘উনি যা বলেছেন তাতে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত, তাই বলছি। আদর্শগত ভাবে যে যা খুশি ভাবতে পারে। কিন্তু, মানুষ বাবা-মায়ের কথা ভাবে। ওই যুবক (দেবাঞ্জন বল্লভ) সেটা ভাবুক। আমি ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনও দিন এফআইআর করিনি। আর ভবিষ্যতেও করব না।’’
আরও পড়ুন: শিক্ষক-পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, উপাচার্যকে দেখতে গিয়ে বললেন রাজ্যপাল
বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বল্লভ পরিবার। চার দেওয়ালের ভিতর তৈরি হচ্ছিল প্রবল উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তার পাহাড়। এ দিন বাবুলের বিবৃতির পর তা এক লহমায় কেটে গিয়েছে। বাবুল সুপ্রিয়র এমন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেটিজেনদের ভূয়সী প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে।