BJP

Arjun Chaurasia: ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জমা পড়বে আদালতে

আদালতের নির্দেশ মেনেই শনিবার কলকাতার সেনা হাসপাতালে বিজেপি কর্মী অর্জুন চৌরাসিয়ার (২৬) দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২২ ০৬:১৪
Share:

ফাইল চিত্র।

আদালতের নির্দেশ মেনেই শনিবার কলকাতার সেনা হাসপাতালে বিজেপি কর্মী অর্জুন চৌরাসিয়ার (২৬) দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। তবে তার রিপোর্ট এ দিন প্রকাশ্যে আনা হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেনা হাসপাতাল থেকে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে কলকাতা হাই কোর্টে জমা দেওয়া হবে। ময়না-তদন্তের পর বিকেলে দেহ অর্জুনের চিৎপুর থানা এলাকার ঘোষবাগানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় নিমতলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, অর্জুনের মৃত্যু নিয়ে নানা মহল থেকে নানা অভিযোগ উঠলেও শনিবার রাত পর্যন্ত অর্জুনের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ চিৎপুর থানায় জমা পড়েনি। আর প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, শনিবার রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অর্জুনের মৃত্যু নিয়ে কোনও রিপোর্ট যায়নি। প্রশাসন আইনি প্রক্রিয়ার দিকে নজর রেখেছে।

Advertisement

এ দিন সকালেই সেনা হাসপাতালে ময়না-তদন্ত শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই মতো সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ আর জি কর হাসপাতাল থেকে অর্জুনের দেহ নিয়ে পুলিশের কনভয় সেনা হাসপাতালে পৌঁছয়। সূত্রের দাবি, কিছু ‘জটিলতার’ ফলে ময়না-তদন্ত শুরু হতে সামান্য দেরি হয়েছে। সকাল ন’টার পরে সেনা হাসপাতালে ময়না-তদন্ত শুরু হয়। সেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট, কল্যাণীর এমস এবং আর জি কর হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও, সেনা হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের দুই চিকিৎসক ছিলেন। ময়না-তদন্তের ভিডিয়ো রেকর্ডিং হয়েছে। বেলা একটার পর দেহটি ফের আর জি কর হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকেই পরিবারের সদস্যদের হাতে অর্জুনের মরদেহ তুলে দেওয়া হয়।

তদন্তকারীদের অনেকে মনে করছেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতেই অর্জুনের মৃত্যুরহস্যের কিনারা হতে পারে। তবে আর জি কর হাসপাতালে তাঁর দেহের যে সুরতহাল (ইনকোয়েস্ট বা কাটাছেঁড়া না করে পুরো দেহ পরীক্ষা) করা হয়েছিল তাতে শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অর্জুন। রাত ১১টার পরেও বাড়ি না-ফেরায় তাঁর পরিবারের লোকেরা থানায় গিয়েছিলেন। তবে কোনও নিখোঁজ ডায়েরি করেননি তাঁরা। শুক্রবার সকালে রেল কলোনির একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। তার পরেই অর্জুনকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তবে এই মৃত্যু রহস্য নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তদন্তকারীদের এসেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, খুন করা হলে ধস্তাধস্তি হত। সে ক্ষেত্রে শরীরে আঘাতের চিহ্ন মেলা উচিত। খুন করে ঝোলানো হলে একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে ওই পরিত্যক্ত কোর্য়াটার্সের কাছাকাছি বাড়ি থেকে লোকজনের উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব। তেমন কোনও ঘটনা ওই এলাকার বাসিন্দাদের নজরে এসেছিল কিনা, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। অর্জুনের পরনের প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেটিও পরীক্ষা করে তথ্যের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, অর্জুনের গলায় একটি রাজনৈতিক দলের উত্তরীয়ের ফাঁস ছিল। সেটি কোথা থেকে আনা হয়েছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে দিন অর্জুন বাড়ি থেকে বেরনোর আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে তাও জানার চেষ্টা চলছে। একটি সূত্রের দাবি, সেই সন্ধ্যায় এক দাদার সঙ্গে অর্জুনের কথা কাটাকাটিও হয়েছিল। যদিও তার সঙ্গে মৃত্যু রহস্যের কোনও যোগ আছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।

Advertisement

অর্জুনের দেহ উদ্ধারের পর শনিবারও থমথমে ছিল তাঁর পাড়া। নানা জায়গায় স্থানীয়দের জটলাও চোখে পড়েছে। এলাকায় প্রচুর পুলিশও মোতায়েন রয়েছে। অর্জুনের বাড়ি সামনে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। অর্জুনের বাড়ির সামনে এবং ওই এলাকায় বসানো হয়েছে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। এ দিন ঘটনাস্থলে যান লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা। ঘটনাস্থল, ওই পরিত্যক্ত কোয়াটার্স পরীক্ষা করেন তাঁরা। ঘটনার গতিপ্রকৃতি বুঝতে ব্যবহার করা হয় থ্রি-ডি স্ক্যানারও। নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল সেনা হাসপাতালকেও। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ময়না-তদন্তের জায়গা ঘিরে রেখেছিলেন সেনাকর্মীরা। কলকাতা পুলিশের কর্মীদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।

অর্জুনের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিকেলে আর জি কর হাসপাতাল থেকে শববাহী গাড়িতে চাপিয়ে দেহ বিজেপির রাজ্য দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মরদেহে মালা দেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মানিকতলায় আমাদের কর্মী অভিজিৎ খুন হয়েছিল। সেই সময় ওরা একবার ময়না-তদন্ত করেছিল। তাতে সন্দেহ ছিল। আদালতে গিয়েছিলাম। আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত হয়। সরকারি হাসপাতাল দেহ গলিয়ে, পচিয়ে দিয়েছিল যাতে কোনও কিছু পাওয়া না যায়। এ বারও ওরা সেই চেষ্টা করেছিল। আমরা এ বার আদালতে গিয়েছি। আদালত আমাদের দাবিকে মান্যতা দিয়েছে।’’ বিজেপির দফতর থেকে শববাহী গাড়ি রওনা দেয় অর্জুনের বাড়ির উদ্দেশে। বিকেল ৫টা ৪০ নাগাদ অর্জুনের দেহ এসে বাড়িতে পৌঁছয়। সে সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। প্রতিবেশীরাও মালা দেন অর্জুনের মরদেহে। তাঁরাও ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অর্জুনের দেহ নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেন পরিজনেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement