শতবর্ষের পুরনো জঙ্গপানা চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘরে-বাইরে চাপে রয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন। রবিবার কার্শিয়াঙের মহকুমাশাসকের ডাকা এক বৈঠকে বাগান খোলার জন্য সেই সংগঠনকে দু’টি শর্ত দিল মালিকপক্ষ।
এ দিন সেই বৈঠকের পরে মালিকপক্ষের তরফে দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক শ্রমিক নেতাকে বাগান থেকে সরানোর দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাগান পরিচালনার কাজে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে ইউনিয়নকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।” বৈঠকে উপস্থিত শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের অবশ্য পাল্টা দাবি, ওই নেতার বিরুদ্ধে মালিকপক্ষকে লিখিত ভাবে তাঁদের অভিযোগগুলি জানাতে হবে। আজ, সোমবার জঙ্গপানা চা বাগান খুলতে শ্রম দফতরের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে।
বাগান খোলা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এ দিনের বৈঠকে হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, লিখিত প্রতিশ্রুতি পাওয়া না গেলে বা অভিযুক্ত নেতাকে না সরানো পর্যন্ত বাগান খোলার ব্যাপারে আগ্রহী নয় মালিকপক্ষ। তাদের আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে ফের গোলমাল হতে পারে। কারণ এর আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে মানেননি ইউনিয়নের স্থানীয় নেতারা। তবে যে শ্রমিক নেতাকে বাগান থেকে সরানোর দাবি উঠেছে, মালিকপক্ষ তাঁর নাম জানাতে চাননি। সন্দীপবাবু শুধু বলেন, “ওই নেতা জঙ্গপানা চা বাগানের শ্রমিক নন, তিনি বাগানে থাকলে ফের একই ঘটনা ঘটতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত।” তবে সোমবারের বৈঠকে বাগান কর্তৃপক্ষের কেউ থাকবেন কি না, তা রবিবার পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।
মোর্চা সমর্থিত চা শ্রমিক সংগঠন তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুরজ সুব্বা বলেন, “মালিকপক্ষ অভিযোগগুলি লিখিত ভাবে আমাদের দিলে তাঁদের দাবি বিবেচনা করে দেখব। আমরাও বেশ কিছু বিষয়ে লিখিত ভাবে মালিকপক্ষকে জানাব।” তিনি জানান, তাঁরা চান আগে দ্রুত বাগান খুলুক। পরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে।
শ্রমিক অসন্তোষের অভিযোগ করে গত বৃহস্পতিবার মালিকপক্ষ বাগানে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের’ নোটিস ঝোলায়। সম্প্রতি বাগানে এক কর্মীকে নিয়োগের বিরোধিতা করে ওই শ্রমিক সংগঠনের তরফে কর্তৃপক্ষকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শ্রমিকদের কাজে আসতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করা হয়। শ্রমিক সংগঠনের পাল্টা অভিযোগ ছিল, অভিজ্ঞতার নিরিখে নিয়োগ না করে মালিকপক্ষ ইচ্ছে মতো কর্মী নিয়োগ করেছে। তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তকে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা মেনে নেবেন বলে এ দিনের বৈঠকে জানিয়েছেন। কার্শিয়াঙের মহকুমা শাসক ইউ স্বরূপ বলেন, “কর্মী নিয়োগ নিয়ে বিরোধ মিটেছে।” তিনি জানান, ভবিষ্যতে বাগানের নানা সমস্যা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মালিকপক্ষ আলোচনা করবে বলেও স্থির হয়েছে। তিনি বলেন, “তবে মালিকপক্ষের তরফে এক শ্রমিক নেতাকে নিয়ে নানা অভিযোগ করা হয়েছে। আশা করছি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সমাধান সূত্র পাওয়া যাবে।”