প্রতীকী ছবি
ডাক্তারবাবুদের করোনা হয়েছে, অতএব ছাড়তে হবে পাড়া। এ হেন কথা শুনে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন দুই চিকিৎসক। কারণ, গত চার মাস ধরে এলাকার একমাত্র কোভিড হাসপাতালে কাজের সূত্রেই তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন। এলাকার যে মানুষগুলোর সেবা করতে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হলেন, তাঁদের কাছ থেকেই এমন ব্যবহার পেয়ে হতবাক তাঁরা।
ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের। ব্লক প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশ্য শেষমেশ পাড়াছাড়া হতে হয়নি দুই চিকিৎসককে। কিন্তু রাজ্য জুড়েই করোনা যোদ্ধাদের যে ভাবে বার বার অমানবিক আচরণের মুখে পড়তে হচ্ছে, তাতে করোনা নিয়ে প্রচার মানুষের কানে কতটা ঢুকছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ক্যানিং মহকুমায় একমাত্র কোভিড হাসপাতাল তৈরি হয়েছে স্টেডিয়ামে। দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দা, ক্যানিং হাসপাতালের দুই চিকিৎসক কোভিড হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। একজন আবার ব্লক স্বাস্থ্য দফতরেও দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন। ক্যানিংয়ের দু’টি আলাদা বাড়িতে এত দিন ভাড়া থাকতেন তাঁরা। পরিবার থাকে দক্ষিণ শহরতলিতেই। দিন সাতেক হল ক্যানিংয়ের তাঁতকলপাড়ায় নতুন একটি বাড়ি ভাড়া করে একসঙ্গে থাকছেন দুই চিকিৎসক। শনি ও রবিবার র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে দু’জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। উপসর্গ না-থাকায় দু’জনেই ভাড়া বাড়ির ঘরে ‘কোয়রান্টিনে’ থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায় এলাকায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাড়ির মালিক সবিনয়ে জানিয়ে দেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এ বাড়িতে তাঁদের আর থাকা চলবে না। পাড়ার লোকজনও সেটাই চাইছেন। চিকিৎসকেরা বলার চেষ্টা করেছিলেন, এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সেই সব যুক্তি কাজে আসেনি। কয়েক জন বাসিন্দা ফোন করেও চিকিৎসকদের পাড়া ছাড়তে বলেন।
সোমবার খবর পেয়ে ক্যানিং ১ বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে তাঁতকলপাড়ায় আসেন। বাড়ির মালিক বিডিওকে বলেন, ‘‘পাড়া-পড়শিকে নিয়েই চলতে হয়। ওঁদের চাপেই ডাক্তারবাবুদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছি।’’ এলাকার বাসিন্দা মিহির নস্কর, ঝর্ণা দে বলেন, “আমাদের এই পাড়ায় এখনও করোনা সংক্রমণ হয়নি। ওঁদের থেকে সংক্রমণ যাতে না-ছড়ায়, তাই এখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে।” বিডিও সকলকে বোঝান, এঁরা দায়িত্ববান চিকিৎসক। গৃহনিভৃতবাসে থাকলে কোনও ভাবে সংক্রমণ ছড়াবে না। আজ, মঙ্গলবার এলাকা জীবাণুমুক্তও করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
বিডিও পরে বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ কিছুটা ভুল বুঝে এমন করেছিলেন। তাঁদের বোঝানো গিয়েছে। ডাক্তারবাবুরা এখানেই থাকবেন।’’
গোটা ঘটনায় বিস্ময় কাটছে না দুই চিকিৎসকের। তাঁদের কথায়, ‘‘যে সব মানুষের জন্য কাজ করছি আমরা, তাঁরাই আমাদের বিপদে পাশে থাকতে চাইছেন না!’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)