ছাত্র বিক্ষোভের রেশ এ বার কলেজের চৌহুদ্দি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল অধ্যক্ষের বাড়িতেও। বুধবার দুপুরে কয়েকজন যুবক দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর কলেজের অধ্যক্ষ জিতেশচন্দ্র চাকির বাড়িতে ঢিল ছুড়ে কাচ ভেঙে দেয়। তাদের মুখে রুমাল বাঁধা ছিল। তারা জিতেশবাবুর স্ত্রীকে গালিগালাজ করেছে বলেও অভিযোগ। জিতেশবাবু সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তবে সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘কড়া হাতে নকল মোকাবিলা করায় কালিয়াগঞ্জ কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র এ দিন দুপুরে আমাদের কলেজে ক্ষোভ দেখিয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে তারাই কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করেছে বলে সন্দেহ হচ্ছে।’’
জিতেশবাবুর বাড়ি কালিয়াগঞ্জেই। রোজ তিনি বাসে করে বুনিয়াদপুরে যান। কালিয়াগঞ্জ কলেজের পরীক্ষার্থীদের আসন পড়েছে বুনিয়াদপুর কলেজে। দু’টি কলেজেরই ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে। এ দিন প্রথমার্ধে ছিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট টু-র পাস কোর্সের ইতিহাস পরীক্ষা। কড়া হাতে পরীক্ষা নিয়েছেন বুনিয়াদপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ। টোকাটুকি করায় কয়েকজন ছাত্রের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এরপরে কালিয়াগঞ্জ কলেজের কয়েকজন ছাত্র বুনিয়াদপুর কলেজের কয়েকটি পাখা, আলো ভাঙচুরও করে। তবে তারপরে দুপুর দু’টোর সময় দ্বিতীয়ার্ধের পার্ট ওয়ানের পাস কোর্সের দর্শনের পরীক্ষা শুরু হয়।
বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ হামলা হয় বুনিয়াদপুর থেকে মোটামুটি ৩০ কিলোমিটার দূরে কালিয়াগঞ্জে জিতেশবাবুর বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ি কালিয়াগঞ্জ কলেজের অনেক ছাত্রই চেনে। যাদের টোকাটুকি করতে বাধা দেওয়া হয়েছে তারাই তাই কালিয়াগঞ্জ ফিরে সঙ্গীদের নিয়ে হামলা করেছে বলে মনে হচ্ছে।’’ জিতেশবাবুর স্ত্রী চন্দনাদেবী তখন বাড়িতে একাই ছিলেন। তিনি জানান, হঠাৎ বাড়ির সিঁড়ির ঘরের জানলার কাচ ভেঙে পড়ার শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে দেখেন, পাথর আর কাচের টুকরো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করায় হামলাকারীরা আমাকে গালাগালি করে আমার স্বামীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। খুব আতঙ্কে রয়েছি।’’ কালিয়াগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ পীযূষ দাস জানান, ‘‘হামলাকারীরা আমার কলেজের ছাত্র হলেও তাদের পরিচয় আমার জানা নেই। তবে তাদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।’’
এ দিন বিকেলে কিছু পরীক্ষার্থী বুনিয়াদপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে কালিয়াগঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক অবরোধের চেষ্টাও করে। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়। সপ্তাহখানেক আগে মালদহের সামসি কলেজে পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যেই ঢুকে দুই শিক্ষিকাকে ‘রেপ করিয়ে দেওয়ার’ হুমকি দেন ওই কলেজেরই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা। তাঁকে দল ও কলেজ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তারপরে ওই জেলারই হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজে পরীক্ষায় টোকাটুকিতে বাধা দেওয়ায় এক শিক্ষককে খুনের হুমকি দেন চাঁচল কলেজের ছাত্র পরিষদের এক নেতা। এ বার টোকাটুকিতে বাধা দেওয়ায় বুনিয়াদপুর কলেজের অধ্যক্ষের বাড়িতে হামলা হল।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কলকাতায় জানান, এই ধরনের বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতেই হবে এবং এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কয়েকটি এলাকার কিছু ঘটনায় গোটা উত্তরবঙ্গে শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে তাঁর অভিমত। পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ওই কলেজের অধ্যক্ষ আমাকে কিছু জানাননি। ঘটনা যারাই ঘটিয়ে থাক, তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’’ কালিয়াগঞ্জ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি-র কপিল দেও সিংহকে এ দিন ফোনে পাওয়া যায়নি। টিএমসিপি-র দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি অতনু রায়ের দাবি, ‘‘এই গোটা ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্কই নেই।’’