ছবি সংগৃহীত।
কেউ পাসপোর্ট, ভিসা বা অস্থায়ী পরিচয়পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় জেলবন্দি হয়েছেন, কেউ বা দুর্ঘটনার জেরে বিপুল পরিমাণ জরিমানার টাকা দিতে না পেরে জেলে বন্দি। কারও আবার কোনও খোঁজই পাচ্ছেন না পরিবারের লোকজন। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় কাজে গিয়ে মুর্শিদাবাদের এমন অন্তত ১৪ জন আটকে রয়েছেন। তাঁরা বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের পোর্টালে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে বিদেশে আটকে থাকা কেউই এখনও দেশে ফিরতে পারেননি।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ ভাবে ১৪ জন আটকে থাকা বা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে নেই। এমন থাকলে খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’
কান্দির ভবানিপুরের খুশিবুর শেখ বছর সাতেক আগে সৌদি আরবে গাড়ি চালকের কাজে যান। তাঁর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, সেখানে যাওয়ার পরে দুর্ঘটনার
কবলে পড়েন খুশিবুর। একটি দামি গাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
তাঁরা শুনেছেন, সেই মামলায় সেখানকার পরিবহণ দফতর ভারতীয় টাকায় খুশিবরকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলে। সেই টাকা দিতে না পারায় তিনি জেলে বন্দি। খুশিবুরের স্ত্রী সুন্দরী বিবি বলেন, ‘‘বাড়িতে ৮ বছরের কন্যা ও বৃদ্ধা শাশুড়ি ছাড়া কেউ নেই। পরের বাড়িতে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলছে।’’ তাঁর আবেদন, ‘‘আমার স্বামীকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক। না হলে, আমরা না খেতে পেয়ে মরব।’’
খড়গ্রামের ভাতকান্দার আতাহার শেখ গাড়ি চালক হিসেব পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরব গিয়েছেন। সেখানে যাওয়ার পর থেকে আতাহারের সঙ্গে পরিবারের কোনও যোগাযোগ নেই। আতাহারের দাদা আক্তার শেখ বলছেন, ‘‘প্রচণ্ড দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে।’’
বহরমপুরের সাহাজাদপুরের আইজুদ্দিন শেখ কিংবা বহরমপুরের হিকমপুরের নজরুল শেখ মাস চারেক আগে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে বিড়ি পাওয়া যায় না বলে মুর্শিদাবাদের বিড়ি সঙ্গে রেখেছিলেন। প্রত্যেকের কাছে ১০ হাজারটা করে বিড়ি ছিল। দুবাই বিমান বন্দরে নেমে সড়কপথে যাওয়ার পথে সৌদি আরবে ঢোকার মুখে চেকপোস্টে তাঁরা ওই বিড়ি সহ ধরা পড়ে যান। তার পর থেকে সেখানকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দি রয়েছে। আবার ভিসা পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বহরমপুরের হালসানাপাড়ার নুরজামাল শেখ দেড় বছর থেকে এবং কান্দির মহলন্দির পলাশ হাজরা ৪ মাস ধরে জেলে বন্দি রয়েছেন।
এ ছাড়াও কান্দির দু’জন, বহরমপুরের ও ভরতপুরের এক জন করে মোট চার জন মালয়েশিয়ায় কাজে যান। সেখানে তাঁদের নাম একটি খুনের চেষ্টার মামলায় জড়ানোয় দু’বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছেন। আবার বেলডাঙার এক জন ৬ বছর ধরে সৌদি আরবে খুনের চেষ্টার মামলায় জেলে বন্দি বলে বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানতে পেরেছে।