সীমান্তবর্তী রাজ্যে বিএসএফের এক্তিয়ারের এলাকা বাড়ানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত ভাবেই প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল রাজ্য বিধানসভায়। রাজ্য সরকার তথা শাসক পক্ষের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে ‘পিছনের দরজা’ দিয়ে রাজ্যে এলাকা দখলের চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া নীতি মেনে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি। সরকারি প্রস্তাবের পক্ষে মঙ্গলবার ভোট পড়েছে ১১২টি এবং বিপক্ষে ৬৩।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিএসএফের এক্তিয়ারের এলাকা বাড়িয়ে দেওয়ার পরে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় মঙ্গলবারের আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। তবে আগামী সপ্তাহে তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা। সূত্রের খবর, আসন্ন দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিএসএফের বিষয়ে রাজ্যের আপত্তির কথা জানাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধী বিজেপি প্রত্যাশিত ভাবেই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। বস্তুত, সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান এবং রাজ্যে জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে বিএসএফের পরিসর আরও বাড়ানো উচিত বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মন্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে বিএসএফের এক্তিয়ার ৫০ নয়, ৮০ কিলোমিটার করা উচিত!”
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পেশ করা প্রস্তাবে এ দিন বলা হয়েছে, বিএসএফের কাজ সীমান্ত পাহারা দেওয়া। সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যের ভিতরে ঢুকে পড়া নয়। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী রাজ্যের এক্তিয়ারের যুক্তি দিয়েই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতার কথা বলেছিলেন। বিধানসভায় এ দিন তৃণমূলের তাপস রায় বলেন, “গত পাঁচ বছরে বিএসএফের বিরুদ্ধে ২৪০টি অত্যাচার, ৬০টি খুন এবং ৮টি নিখোঁজের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। সেই বিএসএফের এলাকা বাড়িয়ে ঘুরপথে রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশে বিজেপি শাসন করবে আর আমরা দাঁত বার করে সেটা দেখব?’’
তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “বিরোধীরা সীমান্তে যে পাচারের অভিযোগ তুলছেন, তা বিএসএফের মদত ছাড়া হতে পারে না।” তাঁর আরও অভিযোগ, “কাঁটাতারের ও’পারে নিজের জমি চাষ করে বিএসএফের বেঁধে দেওয়া নির্ঘণ্ট মেনে মহিলারা আবার ফিরে আসেন। ফেরার সময় তল্লাশির নামে বাচ্চার সামনেই ওই মহিলাদের গায়ে হাত দেয় বিএসএফের লোকজন। যে বাচ্চার সামনে তার মায়ের সঙ্গে বিএসএফ ওই আচরণ করে, সেই বাচ্চা কখনওই দেশপ্রেমিক হতে পারে না!’’ ওই মন্তব্যে বিএসএফ এবং মহিলাদের অপমান করা হয়েছে বলে পাল্টা সরব হন বিজেপি বিধায়কেরা। শুভেন্দু বলেন, “যাঁরা সীমান্ত রক্ষা করেন বলে আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি, তাঁদের সম্পর্কে অশালীন, নিম্ন রুচির কথাবার্তা বিধানসভায় ব্যবহার করা হয়েছে।”
বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, “বিএসএফ শুধু গ্রেফতার এবং ধৃতের কাছ থেকে কিছু বাজেয়াপ্ত করতে পারে। তাদের হাতে তদন্ত বা বিচারের অধিকার নেই। পুলিশের সঙ্গে তাদের কোনও বিরোধ নেই। তা হলে আপত্তি কীসের?”
জবাবি ভাষণে মন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “বিএসএফের এলাকা বাড়লে ১১টি জেলা, রাজ্যের ৩৭% এলাকা, উত্তরবঙ্গের সিংহভাগ তাদের দখলে চলে যাবে। আর যে বিএসএফ ১৫ কিলোমিটারের দায়িত্বে থাকাকালে সীমান্তে অপরাধ ঠেকাতে পারেনি, তারা ৫০ কিলোমিটারের দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজ পারবে কোন যুক্তিতে?”