নির্বাচনের আগে সরকারি অনুষ্ঠানে শিলিগুড়ি এসে, ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ পুরসভায় শাসক দলকেই বেছে নেওয়া পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যথায়, উন্নয়ন ‘বন্ধ’ হয়ে যাওয়ার প্রচ্ছন্ন শাসানিও ছিল তাঁর কথায়।
শিলিগুড়িতে শাসক দলকে ১৭ আসনে থমকে দিয়ে, পাল্টা বার্তা দিয়েছিলেন অশোক ভট্টাচার্য—‘এ বার পাল্টে দেওয়ার সময় হয়েছে’ বলে।
দীর্ঘ দড়ি টানাটানির পরে শেষ পর্যন্ত সোমবার, শিলিগুড়িতে বোর্ড দখলের পরে মেয়র পদে শপথ নিয়ে অশোকবাবু অবশ্য রাজ্য সরকারকে সৌজন্যের বার্তাই ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
বলছেন, ‘‘রাজ্যের পুরমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই। সকলের সাহায্য ছাড়া় উন্নয়ন সম্ভব নয়।’’ সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কিংবা স্থানীয় সাংসদদের কাছেও সাহায্য চেয়ে ‘সুসম্পর্কের’ বার্তা দিচ্ছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘পরিষেবার মান উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য। জনস্বাস্থ্য, বস্তি উন্নয়ন, নিকাশি এবং অবশ্যই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলি তুলে ধরা হবে সকলের কাছে।’’
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সহযোগিতার বার্তা দিলেও ‘আত্মসমর্পণ’ নয়। অশোকবাবু তাই বলছেন, ‘‘কারও দয়ার দান নয়, সাংবিধানিক ব্যবস্থার নিয়ম মেনেই সাহায্য চাই। পুর আইন আছে। সেগুলি রাজ্য, কেন্দ্র, পুরসভা সকলেই মেনে চলবে আশা করছি।’’
যা শুনে পাল্টা সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন ফিরহাদও। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার উপরে উঠে সবাইকে সাহায্য করে রাজ্য সরকার। উন্নয়নের কাজ করলে আমরা পাশে আছি। মানুষের স্বার্থে কাজ করলে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব।’’
প্রায় আড়াই দশক ধরে নিজে পুরমন্ত্রী ছিলেন তিনি। অশোকবাবু জানেন, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে পাশে না পেলে পুরসভা চালানো বামেদের পক্ষে সহজ হবে না। তাই তাঁদের ইস্তেহারে থাকা পাট্টা বিলি, জল-কর মকুব, ট্রেড লাইসেন্সের সরলীকরণের জন্য এ দিনই পুর দফতরে চিঠি পাঠাতে আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পর পর কয়েক দিন ধরে ভূকম্পন যে শিলিগুড়ির পাড়ায় পাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে সে কথা মাথায় রেখেই শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ফিরহাদ হাকিমের কাছে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর আর্জিও এ দিন জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরে সদ্য মেয়র হওয়া অশোকবাবু জানান, ২০ মে দলের কাজে কলকাতায় গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। বলছেন, ‘‘দেখা তো করবই। তবে বিষয়টি পুরমন্ত্রীর উপরে নির্ভর করছে।’’
এ দিন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে মেয়রের চেম্বারে নিয়ে যান জেলাশাসক। সেখানে খানিক বসেই অবশ্য পুর-চত্বরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলে যান অশোকবাবু।
তবে তার আগে পুর কমিশনার সোনাম ওয়াংদি ভুটিয়াকে ডেকে নেন। পুরমন্ত্রীকে একটি চিঠি লেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে একটি ভূকম্পন-বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর অনুরোধ করে চিঠি লিখুন।’’ তার পর মৃদু হেসে যোগ করেন, ‘‘কাজ শুরু হয়ে গেল!’’