বামফ্রন্টের কাউন্সিলরদের নিয়ে মিছিল করে মেয়র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে চলেছেন অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বামেদের কাছে তিনি এখন ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।’ শাসকদের ‘বিজয় রথ’কে তিনি থামিয়ে দিয়েছেন শিলিগুড়িতে। শুধু থামিয়ে দেওয়াই নয়, শুক্রবার দুপুরে যে ভাবে তিনি বামেদের হারানো রাজনৈতিক জমি উদ্ধারের কাজে নামলেন তাতে শুধু শিলিগুড়ি নয়, গোটা রাজ্যেই বামেরা ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।
তিনি অশোক ভট্টাচার্য। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। বিধানসভা ভোটে হারের পরে অনেকেই ভেবেছিলেন তাঁর ‘রাজনৈতিক জীবন’ শেষ। গোড়ায় তিনি এতটাই মুষড়ে পড়েছিলেন যে ‘এত উন্নয়ন-এর কাজ’ সত্ত্বেও ‘কেন হারলাম’ সেই প্রশ্ন করতে গিয়ে চোখ ভিজেও উঠত তাঁর। ‘ওঁর’ হারের পরে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা ছেড়েই দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু, সেই অশোকবাবুই এ দিন দুপুরেই ফ্রন্টের জয়ী কাউন্সিলর ও দলীয় সমর্থকদের নিয়ে দলের কার্যালয় থেকে হিলকার্ট রোড ধরে মিছিল করে পুরসভায় বোর্ড গঠনের জন্য মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলকে মাত্র ১৭ আসনের দাঁড় করিয়ে গোটা রাজ্যেই একটা বার্তা দিল শিলিগুড়ি। তা হল, যা চলছে তা পাল্টে দেওয়া যায়।’’
অশোকবাবুর সঙ্গে এদিন চেয়ারম্যান পদে সিপিএমের দিলীপ সিংহ মনোনয়ন পেশ করেছেন। বামেদের পক্ষে রয়েছেন দলের ২৩ জন ও একজন নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ ওরফে অমু। যিনি বছর দেড়েক আগেও তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার সহ সভাপতি এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ছিলেন। দলের নানা দুর্নীতি ও আপত্তিকর কাজকর্মের প্রতিবাদে দল ছেড়েছিলেন। নির্দল হয়ে ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়েই।
ঘটনা হল, তৃণমূলের এক সূত্র জানিয়েছে, মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে তারাও লড়াই করবে। আসলে, বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর মনোবল শিলিগুড়ি পুরসভা দখলের পরে যে তুঙ্গে পৌঁছবে, তা বুঝতে পারছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও। সে জন্য কোনও কৌশলে বামেদের ‘ম্যাজিক ফিগার’-এ পৌঁছনো আটকানো যায় কি না, তা নিয়ে চুলচেরা আলোচনায় ব্যস্ত তৃণমূলের নেতাদের অনেকেই। দলের অন্দরের খবর, এদিন রাত পর্যন্ত শিলিগুড়িতে পূর্ত দফতরের বাংলোয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে দলের সব কাউন্সিলর ও নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। দলের একটি সূত্র বলছে, সেখানে পুরসভার দলনেতা নান্টু পাল মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন দাখিল করার পক্ষে মত দিলেও অনেকে রাজি হননি। তবে নান্টুবাবু হাল ছাড়তে রাজি নন। তৃণমূল দার্জিলিং জেলা সভপতি গৌতমবাবু বলেছেন, ‘‘আলোচনায় কাউন্সিলররা অনেক কিছু বলেছেন। সব তো প্রকাশ্যে বলা সম্ভব নয়। তবে মনে করি বামেরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সেই হিসেবে বাম বিরোধীরা ২৪টি আসন পেয়েছে।’’
তৃণমূল যে অত সহজে বামেদের বোর্ড গড়তে দেবে না সেটা অশোকবাবুও জানেন। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে তিনি তিলতিল করে গুঁটি সাজিয়েছেন। যে সব মানুষ বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন, বারেবারে তাঁদের কাছে গিয়ে ভুল শুধরে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। অশোকবাবু তাই আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলছেন, ‘‘মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। বেআইনি কাজ করে মানুষের রায়কে অমর্যাদা করলে তা মানবে না শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি গোটা রাজ্যকে পথ দেখাতে চাইছে।’’