গঙ্গাসাগর মেলা আয়োজনের মূল দায়িত্ব থাকে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের হাতে। ফাইল চিত্র।
এ বার কুম্ভমেলা নেই। তাই এ বার পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যতিথিতে রেকর্ড সংখ্যায় মানুষ পুণ্যস্নান করবেন গঙ্গাসাগরে। এমনটাই মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। তাই মেলা শুরুর দিন কুড়ি আগেই স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজ্য সরকার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে। কারণ ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে সে ভাবে মেলার আয়োজন করা যায়নি। কিন্তু ২০২২ সালে ধীর গতিতে ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল সাগরদ্বীপের এই আদি মেলা। কিন্তু সেই দু’বছরের খরা কাটিয়ে এ বার রেকর্ড ভিড় হতে পারে বলেই মনে করছে নবান্ন। কারণ, অন্য বার কুম্ভমেলা থাকলে বহু পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরের বদলে ইলাহাবাদকেই বেছে নেন পুণ্যস্নানের জন্য। কিন্তু এ বার তেমন বিকল্প থাকছে না। সে কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
আগামী বুধবার নবান্নে এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার গঙ্গাসাগর সফরে গিয়েছেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। গঙ্গাসাগর মেলা আয়োজনের মূল দায়িত্ব থাকে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের হাতে। তাই মন্ত্রী পুলক রায় এবং সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে গত এক মাস ধরেই প্রস্তুতির কাজ খতিয়ে দেখছেন।
মকর সংক্রান্তিতে সাগরসঙ্গমে পুণ্যার্থীদের ভিড় এবার সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলে আশা করছে নবান্ন। সে কথা মাখায় রেখে পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছর মেলায় এই ধরনের ব্যবস্থা করে থাকে রাজ্য প্রশাসন। তবে এ বার জনসমাগম বেশি হবে ধরে নিয়েই সেই পরিষেবার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে পাঁচটি অস্থায়ী হাসপাতাল। প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক-সহ বিভিন্ন স্তরের ৭০০-র বেশি স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়েন থাকবেন প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র ও অস্থায়ী হাসপাতালগুলিতে। মেলায় এসে যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তাঁদের জন্য ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ, সাগর হাসপাতাল, কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল-সহ আশপাশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে প্রস্তত থাকতে নির্দেশ জারি করা হয়েছে জেলাশাসকের তরফে।পাশাপাশি, ৭১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক, ১০০ জন নার্স থাকছেন। সাগর মেলা গ্রাউন্ড, ছেমাগুড়ি, কচুবেড়িয়া, লট ৮ এবং নারায়ণপুরে থাকছে অস্থায়ী হাসপাতালের বন্দোবস্ত। এই পাঁচটি কেন্দ্র মিলিয়ে ১০০ শয্যার ব্যবস্থা থাকছে রোগীদের জন্য। সাগরদ্বীপের আশপাশের সরকারি হাসপাতালগুলিতে মোট ২১০টি শয্যা সংরক্ষিত থাকছে মেলায় আগত তীর্থযাত্রীদের জন্য। থাকছে ৩০টি সিসিইউ বেড। ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে মেলা চত্বর পর্যন্ত ৩৭টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
এ ছাড়াও মেলায় করোনা ভাইরাসের হানা ঠেকাতে থাকছে বিশেষ নজরদারি। থার্মাল গানে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের সুবিধা থেকে মাস্ক, স্যানিটাইজারও মিলবে এই কেন্দ্রগুলিতে। করোনা আক্রান্তদের জন্য থাকবে দু’টি সেফ হোম গুরুতর অসুস্থদের দ্রুত চিকিৎিসা কেন্দ্রে আনতে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, দু’টি ওয়াটার বা বোট অ্যাম্বুলেন্স রাখা থাকবে। সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সও থাকবে। থাকছে একটি করে র্যাপিড রেসপন্স এবং কুইক রেসপন্স টিম। কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির ইনচার্জের সঙ্গে এই টিম যোগাযোগ রাখবে। অসুস্থদের সরানোর জন্য গ্রিন করিডর, শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, মৃতদেহ বহন ও সৎকারের জন্যও ব্যবস্থা থাকবে। প্রত্যেকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী হাসপাতাল থেকে মিলবে টেলিমেডিসিন পরিষেবা। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল মেলার সদর কার্যালয়ে সব সময় মজুত থাকবে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে।