বীরেন বসাক। নিজস্ব চিত্র
রাষ্ট্রনায়ক থেকে মনীষী সকলেই প্রতিকৃতিই ফুটে উঠেছে নানা সময়ে তাঁর তৈরি শাড়িতে। আবার পরিবেশ রক্ষা থেকে সমাজ সচেতনতার বার্তাও উঠে এসেছে তাঁর তৈরি শাড়িতে। ফুলিয়ার তাঁতশিল্পী বীরেন বসাক এ বার পদ্ম সম্মান পেতে চলেছেন। এর আগে নানা স্তরে পুরস্কৃত হলেও পদ্মশ্রী সম্মান মুকুটে ওঠায় তা জেলাকে যেমন গর্বিত করবে তেমনই তাঁতশিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন অনেকেই।
১৯৫১ সালে টাঙাইলে জন্ম তাঁর। বর্তমানে শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের চটকাতলার বাসিন্দা বীরেন দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে। তাঁতের শাড়িতে নতুন ধরনের চিন্তা ভাবনা এবং নতুন আঙ্গিকে তাকে হাজির করানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন বারবার। তাঁতের শাড়িতেই তিনি কখনও হাজির করেছেন রামায়ণ, কখনও গুহামানব থেকে আজকের আধুনিক সমাজের বিবর্তনের ইতিহাস। আবার বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তাও ঠাঁই পেয়েছে সেখানে। তাঁতের শাড়িকে এক অন্য আঙ্গিকে পরিবেশনের মাধ্যমে উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার স্বীকৃতি পেলেন এ বার। বীরেনের কথায়, “তাঁত শিল্প এবং তাঁত শিল্পীদের জন্য এই ভাবেই কাজ করে যেতে চাই। বস্ত্র মন্ত্রক, তাঁত শিল্পী সবার থেকেই সহযোগিতা পেয়েছি। তাঁদের সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।” পদ্ম সম্মানে পরিবারের অন্যরাও নিজেদের খুশি গোপন রাখছেন না। বীরেন বসাকের ছেলে অভিনব বসাক বলছেন, “বাবার এই পুরষ্কার আমাদের পরিবার তথা তাঁতিদের কাছেও গর্বের। এই পুরস্কার বুঝিয়ে দিল একটা মানুষ কোনও সাধনার মধ্যে থাকলে এক দিন তাঁর পুরস্কার পাবেই।”
শান্তিপুরের তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অরুণ ঘোষ বলছেন, “বীরেনবাবুর এই সম্মানপ্রাপ্তি আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছে। তাঁতশিল্পের আরও প্রসার ঘটবে এর ফলে।”
দীর্ঘদিন ধরেই তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ফুলিয়ার বাসিন্দা হরিপদ বসাক। তিনি বলেন, “তাঁত শিল্পের ক্ষেত্রে উনি একটা নতুন ধারা এনেছেন। জামদানির ক্ষেত্রে তো বটেই একটা অভিনবত্ব এনেছেন। তাতে রয়েছে শিল্পের ছোঁয়াও। এই ধরনের পুরষ্কার আগামী দিনে তাঁতশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। যদি আরও অনেকে নিজেদের শিল্পসত্তা নিয়ে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আসেন তা হলে প্রসার হবে তাঁত শিল্পের।”