প্রতীকী চিত্র।
কাঁচামাল আনা হত মণিপুর বা উত্তর-পূর্বের অন্য কোনও রাজ্য থেকে। বর্ধমানে ছিল হেরোইনের রান্নাঘর। কাঁচামাল সরাসরি বর্ধমানে যেত না বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ওড়িশার মাদক কারবারিদের হাতে ওই কাঁচামাল পৌঁছে দিত মণিপুরের মাদক চক্রের লোকজন।
এসটিএফের খবর: ধৃতেরা জানিয়েছেন, হেরোইন তৈরির জন্য পোস্তের ফল চিরে পাওয়া আঠা রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেটাকে জলে গুলে বার করা হয় মরফিন। সেই মরফিনে চুন মিশিয়ে বিশেষ যৌগ তৈরি করা হয়। গোয়েন্দারা জানান, ওই যৌগই ওড়িশার মাদক কারবারিরা পৌঁছে দিত বর্ধমানবাসী বাবর মণ্ডলের কাছে। সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে হেরোইন তৈরি করতেন বাবর এবং তাঁর ছেলে রাহুল। সেই হেরোইন ওড়িশা-বাংলা সীমানায় মাদক কারবারিদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হত। রবিবার রাতে বর্ধমানে এসটিএফের অভিযানে ধৃত ওই পিতাপুত্রকে জেরা করে তাঁরা এই তথ্য পেয়েছেন বলে জানান তদন্তকারীরা।
এসটিএফ সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় বেশ কয়েক বার হেরোইন হাতবদল হয়েছে। ধৃতদের কাছে পাওয়া একটি ডায়েরি থেকে কোটি কোটি টাকার হেরোইন লেনদেনের হদিস মিলেছে। সেই সূত্রে ওই চক্রের বাকিদের খুঁজছে এসটিএফ। ধৃত পিতাপুত্রকে ১১ দিন এসটিএফের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাওড়ার আদালত।
অজয় নদের দু’পারের বিস্তীর্ণ এলাকা এক সময় মাদক তৈরির হেঁশেল বলে পরিচিত ছিল। সেখান থেকে লালগোলা বা কলিয়াচক সীমানা দিয়ে মাদক পাচার করা হত। জেরায় বাবর জানান, মঙ্গলকোটে থাকাকালীন তিনি হেরোইন তৈরির কাজ শেখেন। বর্ধমানে আসার পরে মণিপুর থেকে কাঁচামাল এনে হেরোইন তৈরি করছিলেন। পুলিশ জানায়, রাহুল প্রথমে চক্রে যুক্ত ছিল না। পরে সে মাদক পাচারে নামে।
গত বৃহস্পতিবার হাওড়ার গোলাবাড়িতে গাড়ি-সহ আলফাস খান, আমির হাসান, শেখ রশিদ ও ইরশাদ খান নামে চার জনকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। রশিদ ও ইরশাদ বালেশ্বর ও জলেশ্বরের বাসিন্দা। বাকি দু’জন মণিপুরের। তাদের জেরা করেই বাবর-রাহুলকে পাকড়াও করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় ১৩ কেজি হেরোইন, মাদক তৈরির সরঞ্জাম এবং ২০ লক্ষ টাকা।