temple

Preservation of temples: বাংলার মন্দির সংরক্ষণ নিয়ে উদ্যোগী সর্বেক্ষণ

চলতি মাসে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এটি সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ায় তাই রক্ষা পাবে মধ্যযুগের নাম না জানা মন্দির শিল্পীদের একটি অনুপম প্রয়াস।

Advertisement

অলখ মুখোপাধ্যায়

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৮
Share:

যুগী দেউল। নিজস্ব চিত্র

চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে নির্মিত একটি মন্দির সম্প্রতি সংরক্ষণের পথে এগোল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের বেলদা সংলগ্ন দেউলি গ্রামের এই মন্দিরটি যোগী মন্দির বা যুগী দেউল বলে পরিচিত। ল্যাটেরাইট পাথরে তৈরি মন্দিরটির বিশেষত্ব তার নির্মাণ শৈলী।

Advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুখ করা এই মন্দিরটি উত্তর ভারতের নাগর নির্মাণ শৈলী থেকে উদ্ভূত পীঢ়া দেউল রীতির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে মনে করেন পুরাতত্ত্ববিদরা। ক্যালকাটা গার্লস কলেজের ইতিহাসের শিক্ষিকা শর্মিলা সাহা জানান, নাগর মন্দির শৈলীর দু’টি রূপ, রেখ ও পীঢ়া রীতির মন্দির ওড়িশায় দেখা যায়। সেখানে মূল রেখ দেউলের সামনে পীঢ়া বা জগমোহন দেখা যায়। এটিকে শিল্পশাস্ত্রে নিয়ম মেনে অনেক সময় ভদ্র দেউলও বলা হয়। বাংলায় পরবর্তীতে পীঢ়া একটি স্বতন্ত্র মন্দির শৈলী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই রীতির মন্দিরের ছাদ পিরামিডের মতো নীচে থেকে উপরে ধাপে ধাপে ছোট হয়। এই ভদ্র রীতির মন্দির পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি পাওয়া যায় পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায়। যুগী দেউলের ভূমি নকশা চৌকো। আলাদা আলাদা দেওয়াল থেকে ধাপে ধাপে ছোট হতে হতে উপরে উঠে গিয়েছে। এই ধাপগুলির শীর্ষে রয়েছে একটি করে আমলক, যা পলকাটা কলসের মতো দেখতে। যুগী দেউলে রয়েছে পাঁচটি আমলক, যা মধ্যযুগের ওড়িশী রীতিতে কম দেখা যায়। পঞ্চম আমলকটি রয়েছে গর্ভগৃহের মাথায়।

পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই ভদ্র রীতির মন্দির তৈরির শৈলী বহু প্রাচীন কাল থেকেই স্থানীয় এলাকায় প্রচলিত ছিল। সরসী কুমার সরস্বতী ১৯৭৬ সালে সে কথা লিখেছেন। তাঁদের মতে, বাঁশ, কাঠ ও খড় দিয়ে এই ধরনের মন্দির খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকেই প্রচলিত ছিল। সরসী কুমারের মতে, এই নির্মাণ শৈলীর মধ্যে যেমন বৌদ্ধ প্রভাব রয়েছে, তেমনই রয়েছে জৈন ও ব্রাহ্মণ্য মন্দির নির্মাণ শৈলীর আভাসও। তাঁদের মতে, মূলে উত্তর ভারতীয় মন্দির শৈলীর প্রভাবে জন্ম হলেও ক্রমে এই শৈলী ওড়িশা সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম বাংলায় স্থানীয় শিল্পীদের হাতে নিজস্ব রীতি পায়। চলতি মাসে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এটি সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ায় তাই রক্ষা পাবে মধ্যযুগের নাম না জানা মন্দির শিল্পীদের একটি অনুপম প্রয়াস। সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডলের অধিকর্তা শুভ মজুমদারের কথায়, ‘‘আমাদের দল গত মাসে মন্দিরটি পরিদর্শন করে এবং গুরুত্ব উপলব্ধি করে জেলাশাসককে আমরা চিঠি দিয়েছি।’’ স্থানীয় সংগঠন ধ্রুপদি হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নিরলস প্রয়াসের ফলেই অবশেষে সংরক্ষণের এই প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হওয়ার পথে।

Advertisement

এই গ্রামের মানুষ মনে করেন, কোনও এক যোগী কোনও দিন এখান দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে গ্রামটিতেই দাঁড়িয়ে পড়েন। এখানেই হয়তো কোথাও বসেছিলেন তপস্যায়। হয়তো তাঁকে ঘিরে সাধন-ভজনের আসরও বসত। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই যোগীকেই স্মরণ করে মন্দিরটি তৈরি করা হয়। তার পরে বয়সের ভারে এক কোণে পড়েছিল তা। অনেকে এই মন্দিরকে নাথযোগী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করতেও আগ্রহী। এই মন্দির ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির, না জৈন, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এখনও পৌষ সংক্রান্তিতে এই যুগী দেউলের পাশে বসে বিরাট মেলা, সেই নাম না জানা যোগী পুরুষকেই হয়তো স্মরণ করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক রজত সান্যাল বলেন, ‘‘পেশাদার গবেষণা তো চলবেই কিন্তু ধ্রুপদির কার্তিক মাইতিরা প্রমাণ করলেন, সাধারণ মানুষের উদ্যোগ ছাড়া প্রত্ন ঐতিহ্যের সংরক্ষণ অসম্ভব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement