প্রতীকী ছবি।
কলকাতা ও পাথরপ্রতিমা: করোনার প্রতিষেধক কোভিশিল্ডের মতো কোভ্যাক্সিনও রাখা হল বাগবাজারের কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোরে। শুক্রবার দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় ওই প্রতিষেধকের ১ লক্ষ ১২ হাজার ৯৬০টি ডোজ়। তবে এখনই ওই প্রতিষেধক প্রদান শুরু হচ্ছে না বলেই স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
কয়েক দিন আগেই রাজ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে কোভিশিল্ডের ৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ডোজ় এসেছে। তা বাগবাজারের স্টোরেই সংরক্ষিত আছে। প্রথম পর্যায়ে কোভিশিল্ড এসে ছিল ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার। রাজ্যে প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী মিলিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ স্বাস্থ্য কর্মীদের দুটি করে ডোজ় দেওয়ার কথা। সূত্রের খবর, রাজ্যে যে পরিমাণ কোভিশিল্ড প্রতিষেধক এসেছে তাতে তাঁদের সকলকেই দুটি করে ডোজ় দেওয়া সম্ভব। সেই প্রক্রিয়া চলাকালীন এখনই কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধক ব্যবহার শুরু হচ্ছে না । রাজ্যের এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “কোভ্যাকসিন কী ভাবে ব্যবহার হবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও নির্দেশিকা আসেনি।”
বাগবাজারের কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোরের ‘ওয়াক-ইন কুলারে’ কোভ্যাকসিন গুলি রাখা হচ্ছে। ৫৬৪৮টি ভায়ালে ২০ মিলিলিটার করে প্রতিষেধক রয়েছে। অর্থাৎ একটি ভায়াল থেকে ২০ জনকে দেওয়া যাবে। এ দিন প্রতিষেধক কোভিশিল্ড প্রদানের ষষ্ঠ দিনে ৩৫১টি কেন্দ্র থেকে ৩০,৫১৭ জনকে (৮৭%) প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, ৬ দিনে সারা রাজ্যে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৩৭২ জন গ্রাহকের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮৪,৫০৫ জনকে (৭১%) প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। এ দিনও প্রতিষেধক নেওয়ার পরে ১১ জনের মৃদু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে আলিপুরদুয়ারের একজন মহিলা গ্রাহককে সেখানকার গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তিনি হাইপারটেশনে আগে থেকেই আক্রান্ত থাকার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
একইসঙ্গে এ দিনও পাথরপ্রতিমায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ রাজ্জাক ও চার জন কর্মাধ্যক্ষ প্রতিষেধক নেওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর আগে
সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, যাঁদের নিয়ে বিতর্ক, তাঁরা সকলে রোগীকল্যাণ সমিতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাই এই পর্যায়ে প্রতিষেধক নিতেই পারেন। রাজ্জাক বলেন, ‘‘আমাদের মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। তাই টিকা নেওয়া জরুরি। এতে দোষের কী আছে!’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির কেউ টিকা নেবেন কিনা। আমরা সেই মতো বিডিও, যুগ্ম বিডিও, কর্মাধ্যক্ষ মিলিয়ে ১৩ জনের নাম পাঠিয়েছিলাম। নামের তালিকা অনুযায়ী আজ ৮ জন টিকা নিয়েছেন। বাকিরা পরে নেবেন।’’
প্রতিষেধক নিয়ে মানুষের মনে অজানা ভীতি রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে হাতেগোনা কয়েক জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এতদিন পর্যন্ত যাঁদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল তাঁরা সকলেই সুস্থ রয়েছেন। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি পিঙ্কি শূরকে বৃহস্পতিবার ছুটি দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, ড্রাগ অ্যালার্জির কারণেই তিনি অসুস্থ হয়েছিলেন। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চূড়ান্ত কারণ এখনও বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
অন্যদিকে রাজ্যে আরেকটি দেশীয় প্রতিষেধক আহমেদাবাদের ক্যাডিলা হেলথ কেয়ার লিমিটেডের জাইকোভ-ডি এর তৃতীয় ট্রায়াল শুরু হবে শীঘ্রই। রাজ্যে ভ্যাকসিন গবেষণার প্রক্রিয়ার সংযোগকারী সংস্থা ক্লিনিমেড লাইফ সায়েন্সের তরফে স্নেহেন্দু কোনার বলেন, "জাইকোভ ডি হল ডিএনএ ভ্যাকসিন। এটিকে ঘরের সাধারণ তাপমাত্রাতেও রাখা সম্ভব। ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়াও রাজ্যে ২টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি হাসপাতালে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ছাড়পত্র দিয়েছে।"