—ফাইল চিত্র।
শহরে তাঁর গাড়ির সামনে থাকে না পাইলট কার। এমনকি, জেলা সফরে তাঁর গাড়ির সামনে জ্যামার থাকা নিয়েও আপত্তি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎসবের ভিড়ে কোনও অসুবিধার সৃষ্টি করতে চান না বলে পুজো শুরুর দু’দিন আগে উদ্বোধন পালা সাঙ্গ করে বাড়িতে ঢুকে যান তিনি। কিন্তু লালবাতিওয়ালা বিভিন্ন গাড়ি বড় বড় কনভয় নিয়ে পুজোর ভিড়ে ঘুরে বেড়ায়। সেইসব গাড়ির আরোহীরা ‘ভিআইপি’ মর্যাদায় মণ্ডপে ঢোকেন। তখন সাধারণ লোকের লাইন থেমে থাকে। ওইসব কনভয়ের দাপটে রাস্তায় যান চলাচলে প্রভাব পড়ে। এই অবস্থা মুখ্যমন্ত্রী চান না।
পুজোর সময়ে লালবাতির ব্যবহারের বন্ধের জন্য কয়েকদিন আগে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আর্জিকে এ বার প্রচারের আঙিনায় নিয়ে এলেন রাজনৈতিক কুশলী প্রশান্ত কিশোর। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির ফেসবুক পেজে দুর্গাপুজোর সঙ্গে আমজনতার ভিড়কে ব্যবহার করে কার্টুন তৈরি করেছেন পিকে। সেখানে দেখিয়েছেন, পুজোর লাইনে থাকা আমজনতাও উচ্ছ্বাসে বলছেন, ‘আমরা সবাই ভিআইপি’।
তিনি আর পাঁচজন রাজনীতিকের মতো যাতায়াতের পথে ভিআইপি সুবিধা নেন না। তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে মমতাকে। তা রেলমন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রী—কোনও সময়ে সেই সমস্যায় ছেদ পড়েনি। তার জেরে কখনও তাঁর প্রাণ সংশয় হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, আবার কখনও তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে পুলিশের লাঠির আঘাত প্রায় পড়তে যাচ্ছিল। পাইলট কার সামনে নেই। কয়েক বছর আগে ভিক্টোরিয়ার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হঠাৎ একটি গাড়ি মমতার গাড়ির সামনে চলে আসে। ধাক্কার মারার উপক্রম হয়। সেই গাড়িতে ছিলেন কোনও এক শিল্পোদ্যোগী। তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা নেমে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির সামনে গিয়ে হম্বিতম্বিও শুরু করেছিলেন। তাঁরা বুঝতেই পারেননি গাড়িতে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। অবশ্য কয়েক মুহুর্তের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা পুরোপুরি পরিস্থিতি সামলে নেন।
হাজরা থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে ছোট গাড়ি নিয়ে এগোচ্ছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা। পিছনে লালবাতিওয়ালা সাদা অ্যাম্বাসেডার রেলমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে আসার সময়ে সেখানে থাকা এক ট্র্যাফিক কর্মী দেখছিলেন, যে একটি ছোট গাড়ি পিছনের লালবাতিওয়ালা গাড়িগুলির পথ আটকাচ্ছে। তা দেখে লাঠি উঁচিয়ে মমতার ছোট গাড়ির দিকে তেড়ে যান ওই ট্র্যাফিক কর্মী। অ্যাম্বাসাডারে থাকা রক্ষীরা বারবার ইশারা করেন ওই গাড়িতেই আছেন ‘আসল ভিআইপি’। সেই গাড়িতে মমতাকে দেখে কার্যত জিভ কেটে সেলাম ঠুকতে থাকেন ওই ট্র্যাফিক কর্মীরা।
তবে পুজোর ভিড়ে লালবাতির যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার পিছনে ‘রাজনীতি’ও দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। তাঁদের মতে, এই নির্দেশে তৃণমূল মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিশেষ বর্তায় না। কারণ, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের প্রায় সকলের নিজের পুজো রয়েছে। ফলে তাঁদের অন্য পুজো মণ্ডপে ঘোরার সময় কার্যত নেই। আর জেলার মন্ত্রীরা জেলাতে থাকেন।
তা হলে এই নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য কারা? পর্যবেক্ষকদের অনুমান, এখন যাঁরা দিল্লির মন্ত্রী বা কেন্দ্রের জেড-ওয়াই স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে থাকেন, সম্ভবত তাঁরাই লক্ষ্য।