নিহত ভাদু শেখ। — ফাইল চিত্র।
বীরভূমে ভাদু শেখ খুনের পরে তার বদলা নিতে বগটুই গ্রামে হত্যালীলার ঘটনায় অভিযুক্ত এক লালন (বড়) আগেই মারা গিয়েছে সিবিআই হেফাজতে। এ বার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ভাদু খুনের মূল অভিযুক্ত লালন শেখ ওরফে ছোট লালন।
অভিযোগ, ২০২২ সালের ২১ মার্চ বীরভূমের রামপুরহাটের বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে রামপুরহাটের জাতীয় সড়কে রাত আটটা নাগাদ বোমা মেরে খুন করা হয়েছিল। মূলত বেআইনি বালি, পাথর পাচারের লভ্যাংশের ভাগ বাটোয়ারা এবং এলাকার দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে ভাদুকে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি সিবিআইয়ের। ছোট লালন সেই ঘটনার মূল অভিযুক্ত। প্রসঙ্গত, ভাদু খুন হওয়ার পরে প্রতিহিংসায় স্থানীয় বগটুই গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হত্যালীলা চালিয়ে নারী, শিশু-সহ ১০ জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিল আরেক লালন শেখ ওরফে বড় লালন। পরে সেই বড় লালনের মৃত্যু হয় সিবিআই হেফাজতে।
ঘটনার পরম্পরায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি ভাদু খুন। আরেকটি বগটুই গ্রামে হত্যালীলা ও বাড়িতে অগ্নি সংযোগের মামলা।ঘটনার পরের দিনই, ২২ মার্চ ভাদু খুনের অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে ছোট লালনকে গ্রেফতার করে বীরভূম জেলা পুলিশ। কিন্তু ঘটনার পর ফেরার হয়ে গিয়েছিল বড় লালন। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে দু’টি মামলারই তদন্তভার নেয় সিবিআই। গত বছর ৪ ডিসেম্বর বড় লালনকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
১২ ডিসেম্বর রামপুরহাটের একটি অতিথি নিবাসে সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরের শৌচালয় থেকে গলায় গামছার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় বড় লালনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় মামলার দুই তদন্তকারী অফিসার-সহ চারজনকে বিভাগীয় তদন্তের পর সাসপেন্ড করে সিবিআই। বড় লালনকে সিবিআই হেফাজতে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তার পরিজনেরা। উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি।
গ্রেফতারের পর থেকে বীরভূমের সিউড়ি সংশোধনাগারে ছিল ছোট লালন। মাস ছয়েক আগে তাকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল বলে জেল সূত্রের খবর। জেল হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তার চিকিৎসা শুরু করেন। সূত্রের খবর, ডান গালের ভিতরে একটি ঘা মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
প্রথমে সরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। সংশোধনাগার সূত্রের খবর, পরীক্ষায় ছোট লালনের শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। সূত্রের খবর, চিকিৎসার কারণেই উচ্চ আদালত লালনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে।
পরবর্তীকালে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন সেখানেই সে চিকিৎসাধীন। প্রচুর পরিমাণে খৈনি ও গুটকা খাওয়ায় তার গালের ডান পাশ পুরোপুরি পচে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের দাবি। চিকিৎসকদের কথায়, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ছোট লালন। ক্রমশ তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে মারণরোগ।