(বাঁ দিক থেকে) আনিসুর রহমান, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং আলিফ নুর। —ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দুই দফায় মোট ১.৬৪ কোটি টাকা নিয়েছিলেন রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান বিদেশ এবং তাঁর ভাই আলিফ নুর ওরফে মুকুল রহমানের কাছ থেকে। তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে ইডি। এর মধ্যে ৯৪ লক্ষ টাকা নগদ নিয়েছিলেন বালু। পরে আরও ৭০ লক্ষ টাকা তাঁকে দেওয়া হয়। কেন তাঁদের মধ্যে এই লেনদেন হয়েছিল, এগুলি কিসের টাকা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও ইডি সূত্রে খবর, এখনও আনিসুর এবং আলিফ এই লেনদেন সংক্রান্ত কোনও তথ্য ইডিকে দেননি। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা লেনদেনের কথা অস্বীকারও করেছেন।
তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে, আনিসুর এবং আলিফ ৯৪ লক্ষ টাকা নগদ তুলে দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়ের হাতে। পরে সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা করা হয়। এর পর দ্বিতীয় দফায় আরও ৭০ লক্ষ টাকা তাঁরা দেন জ্যোতিপ্রিয়কে। তবে সেই টাকা নগদ দেওয়া হয়েছিল কি না, স্পষ্ট নয়। জেরার মুখে ধৃতেরা এই লেনদেনের কথা অস্বীকার করলেও এই সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রমাণ ইডির কাছে রয়েছে বলে খবর। এ ছাড়াও ইডি জানতে পেরেছে রেশন মামলায় অপর ধৃত বাকিবুর রহমানের কাছ থেকেও ৯০ লক্ষ টাকা আনিসুর এবং আলিফের কাছে এসেছিল।
বাকিবুর কেন এত টাকা দুই ভাইকে দিলেন, তা খতিয়ে দেখছে ইডি। আত্মীয়তার কারণে এই টাকার লেনদেন হয়েছিল, না কি রেশন দুর্নীতির উপার্জিত অর্থ আনিসুর এবং আলিফকে দিয়েছিলেন বাকিবুর, জানার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এই সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা।
প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে আনিসুর এবং আলিফকে। আগেই একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন বাকিবুর। জ্যোতিপ্রিয় নিজেও রেশন মামলাতেই জেল খাটছেন। শুক্রবার আনিসুর এবং আলিফকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আদালতে ইডি দাবি করে, জ্যোতিপ্রিয়ের সংস্থাকে ১০ লক্ষ টাকা করে সুদ দিতেন আনিসুর এবং আলিফ। ইডির আরও দাবি, গত ডিসেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর যে ‘চিঠি’ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল তাতে, এবং তদন্তের সূত্রে পাওয়া দুই ফোল্ডারে লুকিয়ে রয়েছে রেশন দুর্নীতির রহস্য।
ইডি জানতে পেরেছে, জ্যোতিপ্রিয়ের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে যিনি কাজ করতেন, তিনিই আনিসুর এবং আলিফের সঙ্গেও কাজ করতেন। অর্থাৎ, তাঁদের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন একই ব্যক্তি। তাঁর নাম শান্তনু ভট্টাচার্য। তাঁর কাছ থেকেও বেশ কিছু নথি এবং ডিজিটাল তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে খবর। আদালতে ইডি জানায়, শান্তনুর দফতর ডায়মন্ড হেরিটেজে তল্লাশি চালিয়ে কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে একটি ফোল্ডার ছিল ধৃতের নামে। ফাইলে লেখা ছিল ‘মুকুলদা’। ইডির দাবি, সেখান থেকেই তারা জানতে পারে ধৃতেরা বালুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থায় টাকা দিয়েছিলেন। ধৃতদের সংস্থার ফাইলও ছিল সেখানে। ১০ লক্ষ টাকা সুদের কথাও সেখান থেকেই জানা গিয়েছে।