ক্রেতার পথ চেয়ে আনন্দধারার কর্মীরা। —মনোজ মুখোপাধ্যায়
চিলি চিকেন থেকে তেলেভাজা। রান্নার গুণে চেটেপুটে খেতে হতো সব।
তবে ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন অর্ডার দিলে মিলত। এমনিতে পাওয়া যেত রুটি, আলুর দম, ছোলার ডাল বা যখনকার যে সব্জি, তার তরকারি। মালদহ প্রশাসনিক ভবন চত্বরের আনন্দধারা নামে এই ক্যান্টিনের নামও ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। কিন্তু নোট বাতিলের ধাক্কায় দু’মাসের মধ্যে বিক্রি কমে গিয়েছে তিন গুণ। মুড়ি আর রুটি বিক্রি করতেই এখন হিমশিম অবস্থা। প্রত্যন্ত গ্রামের সাত বধূর উদ্যোগ এই আনন্দধারা তাই ঝাঁপ ফেলার মুখে।
এই সাত মহিলার বাড়ি ইংরেজবাজার ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তে। কারও স্বামী শ্রমিক, কারও স্বামী গাড়ি চালান। বছর তিনেক আগে ইংরেজবাজার ব্লক অফিসে মহিলাদের স্বনির্ভর দল গঠনের কাজ চলছিল। সে সময়েই এই সাত জন মিলে নিজেদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেন। নেত্রী হন ইংরেজবাজারের বাগবাড়ির জ্যোৎস্না গোস্বামী। আম্বেরা খাতুন, ডলি বিবিরা প্রথম দিকে বাড়িতেই ডাল, সাবু, সুজি দিয়ে পাঁপড়, বড়ি তৈরি করে বিক্রি করতেন। খুব সাধারণ পরিবার থেকে আসা ওই বধূদের উৎসাহ দেখে প্রশাসনের ব্যবস্থায় তাঁরা গ্রাম উন্নয়ন ভবনের নীচের এক কোণায় ছোট্ট একটি ঘরও পান। শুরু হয় ক্যান্টিন। বাজারের থেকে সস্তা দরে ঘুগনি মুড়ি, তেলেভাজা, রুটি, ডাল, আলুর দম বিক্রি করতেন। আস্তে আস্তে তাঁদের হাতের গুণের কথা ছড়াতে থাকে। তারপরেই তাঁরা নানা অর্ডার পেতে শুরু করেন। মাসের মধ্যে অন্তত দশ দিন ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেনের বড় অর্ডার মিলত। সরকারি কর্মী স্বপন সরকার বলেন, ‘‘সত্যি বলতে চিলি চিকেন থেকে তেলেভাজা, সবই একবার খেলে আবার খেতে হত। কিন্তু এখন নগদের অভাবে কেউই আর বেশি খরচ করে কেতে চায় না।’’ সেই প্রভাবটাই পড়েছে ক্যান্টিনের উপরে।
নোট বাতিলের আগে পর্যন্ত রোজ আয় হতো গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। আট কেজি মুড়ি ও সাত কেজির রুটিও বিক্রি হত। প্রত্যেকেই দিনের শেষে হাতে চারশো থেকে পাঁচশো টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতেন। কিন্তু ৮ নভেম্বর থেকে বদলে গিয়েছে কেনাবেচা। দিনের শেষে কখনও ২০০ টাকা, কখনও ৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। বড় খাওয়াদাওয়ার অর্ডার কমেছে হু হু করে।
সবলা মেলাতেও বিক্রি কম হয়েছে। জ্যোৎস্নাদেবীরা জানান, ২০১৫-এর সবলা মেলা থেকে তিন লক্ষ টাকার জিনিস বিক্রি হয়েছিল। গতবারের কথা ভেবে বাজার থেকে ঋণ নিয়ে ৩ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র কিনেছিলেন। তবে এ বারে তাঁদের বিক্রি হয়েছে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, ‘‘ফলে বাজারে ঋণ হয়ে গিয়েছে আমাদের। বিক্রিও নেই। এমন চলতে থাকলে দ্রুত ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাবে আমাদের ক্যান্টিনের।’’
জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিল। যতটা সম্ভব আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’