Radhikapur Express

এড়ানো গিয়েছে সংঘর্ষ, কিন্তু রাধিকাপুর রেখে গেল প্রশ্নও, খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন

রবিবার আপ রাধিকাপুর এক্সপ্রেস একটুর জন্য বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ায়। দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও প্রশ্ন ওঠা ঠেকানো যাচ্ছে না। গাফিলতি ছিল কি না তা খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০৭
Share:

রবিবার গভীর রাতে বল্লালপুর ওভারপাসের নীচে রাধিকাপুর এক্সপ্রেস এবং লরিটি। — ফাইল ছবি।

কোনও রকমে বড়সড় দুর্ঘটনা এড়িয়েছে আপ রাধিকাপুর এক্সপ্রেস। গত রবিবারের পর কেটে গিয়েছে দু’টি দিন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ট্রেনচালক তৎপর না থাকলে কী হত, তা নিয়ে। সেই প্রেক্ষিতেই উঠে এসেছে গাফিলতির একাধিক কারণও। চালকের তৎপরতায় এ যাত্রায় এড়ানো গেলেও বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল বলেই মনে করছেন রেলের প্রবীণ ইঞ্জিনিয়াররা। লেভেল ক্রসিং না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে লাইনে লরি চলে এল, তা নিয়ে উঠেছে একাধিক তত্ত্ব। গাফিলতি, না যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখছে রেল। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টও জমা পড়বে চলতি সপ্তাহের শেষে। তার আগে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

জাতীয় সড়কের বল্লালপুর ওভারপাসের ঠিক ২০ মিটার নীচ দিয়ে গিয়েছে আপ ও ডাউন লাইন। ওভারপাসের ঠিক শুরু থেকে সেতু ঘেঁষে রেললাইন পর্যন্ত নেমে এসেছে ৫০ মিটারের বোল্ডার নির্মিত ঢাল। বল্লালপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরের সেতু থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালিবোঝাই ১২ চাকার একটি লরি বোল্ডার বিছানো ঢাল ধরে সরাসরি নেমে আসে আপ ও ডাউন লাইনের মাঝে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, চেষ্টা করেও লাইন থেকে এক ইঞ্চিও লরিটিকে নড়াতে পারেননি চালক। জানা গিয়েছে, বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দুই লাইনের মাঝখানে আটকে থাকা লরি ফেলে রেখেই তার আলো নিভিয়ে সেখান থেকে চলে যান চালক ও সহকারি। রাত ঠিক ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ আপ রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ওই লাইনে চলে আসে। বিরাট দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। লোকো পাইলট ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে সে যাত্রায় অনেকগুলি প্রাণ বাঁচিয়ে দেন। যদিও নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে দিল রাধিকাপুর ট্রেন দুর্ঘটনা।

জাতীয় সড়কের উপর গুরুত্বপূর্ণ সেতুর স্পর্শকাতর অংশে ও দুর্ঘটনাপূর্ণ বাঁকে কেন কোনও সিগন্যালিং ব্যবস্থা রাখা হয়নি? বল্লালপুর সেতু থেকে রেললাইন পর্যন্ত ঢালু রাস্তা বোল্ডার বিছানো হওয়ায় তা স্বভাতই পিচ্ছিল। সেখানে যাতে কোনও রকম ভারী যান ঢুকে না পড়ে, সে জন্য ব্যারিকেডের ব্যবস্থা ছিল না কেন? যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড় কিংবা সেতুতে ২৪ ঘণ্টা মোতায়ন থাকে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রায় এক ঘণ্টা তাঁদের দেখা যায়নি। তা যদি সত্যি হয়, তা হলে সেই সময় ট্রাফিক পুলিশ কোথায় ছিল? এবং সবচেয়ে শেষ তথা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, কয়েকশো মিটার দূরত্বে থাকা রেল পুলিশের ভূমিকাই বা সে দিন কী ছিল? রেলের ট্র্যাকম্যান ও সিগন্যাল অপারেটরদের কাছে লাইন ব্লকেজের খবর পৌঁছল না কেন?

Advertisement

মালদহের ডিআরএম বিকাশ চৌবে বলেছেন, “লরির জেরেই দুর্ঘটনা। লেভেল ক্রসিং দিয়ে লরি আসেনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ওভারপাসের উপর থেকে লরিটি নেমে এলেও কোনও ভাবে তা উল্টে যায়নি। সোজা হয়েই রেললাইনের উপর লরি দাঁড়িয়ে ছিল। তবে লরিচালক যদি কোনও আলো দেখাতেন সে ক্ষেত্রে ট্রেনের চালক দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন।”

সে দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অমিয় মণ্ডল বলছেন অন্য কথা। তাঁর দাবি, ‘‘ফরাক্কার দিক থেকে আমরা বহরমপুরের দিকে সব্জিবোঝাই লরি নিয়ে আসছিলাম। দেখলাম, ১২ চাকার লরিটি পাশের রাস্তা ধরে ট্রেন লাইনে আটকে গেল। অনেক চেষ্টা করেও লরিটিকে আর লাইন থেকে বার করা যায়নি। পুলিশের টহলদারি ভ্যানকে জানানো হলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি।’’ ওই ট্রেনের যাত্রী কলকাতার বাসিন্দা সোমা সিংহরায় বলেন, ‘‘বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সাইড অপার বাঙ্কে ঘুমোচ্ছিলাম। আচমকা ঝাঁকুনিতে আমি বাচ্চা নিয়ে বাঙ্ক থেকে নীচের মেঝেতে ছিটকে পড়ি। সবাই তখন আতঙ্কে চিৎকার করছিলেন। বাইরে মুখ বার করে দেখি দাউ দাউ করে জ্বলছে ট্রেনের ইঞ্জিন। মনে হয়নি এ যাত্রায় প্রাণ বাঁচবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement