চলছে আলপনা দেওয়ার কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামিকাল, শনিবার দুপুরে তাঁর বাড়িতেই খাওয়াদাওয়া সারবেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই তাই সাজসাজ ব্যাপার বালিজুড়ি গ্রামের সনাতন সিংহের বাড়িতে। মাটির দেওয়ালে রঙের পোঁচ থেকে আলপনা, সবই হচ্ছে। চলছে খাবারদাবার-সহ আতিথেয়তার নানা আয়োজন পর্ব। রাত পোহালেই যে ‘দুয়ারে পা’ রাখবেন ভিভিআইপি। শাহি অতিথির আপ্যায়নে আন্তরিকতার কোনও অভাব রাখতে চাইছে না সিংহবাড়ি।
শুরু হয়েছিল নকশালবাড়ির মাহালি দম্পতিকে দিয়ে। ২০১৭-র এপ্রিলে রাজ্য সফরে এসে ওই দম্পতির বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন অমিত। সেই শুরু। তার পর বাংলায় রাজনীতির জল অনেক দূর গড়িয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েক বার রাজ্যে এসে একাধিক দলিত-আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন তিনি। তা নিয়ে বহু কটাক্ষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। কিন্তু সে সব উড়িয়ে বিজেপি-র এই ‘রীতি’ চলছেই। এ বারের রাজ্য সফরে অমিত তাই পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির কর্ণগড় ১০ নম্বর পঞ্চায়েতের বালিজুড়ি গ্রামে সনাতন সিংহের অতিথি।
বৃহস্পতিবার রাতে বালিজুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, প্রস্তুতি চলছে সিংহবাড়িতে। একচালা মাটির বাড়ি। সামনে উঠোন। পাশে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় তৈরি হচ্ছে ছোট পাকা বাড়ি। তড়িঘড়ি সেটিও রং করা হয়েছে। মাটির যে বাড়িতে অমিতকে আপ্যায়ন করা হবে, সেটিতেও নতুন রং। তার উপর চলছে আলপনা দেওয়ার কাজ। এলাকার বিজেপি কর্মী নিতাই জানা, সমর সিংহ, সঞ্জয় সিংহ, দীপঙ্কর সিংহেরা রং-তুলি নিয়ে ব্যস্ত সে সব কাজে। দরজার দু’ধারে আঁকা হয়েছে কলাগাছ। আর সনাতন? তিনি গোটাটার তদারকিকে। বললেন, ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পা পড়বে এই বাড়িতে। না সাজালে চলে! আমি আজ কাজেও যাইনি।’’
আরও পড়ুন: জিতেন্দ্রকে মেনে নিতে পারব না, ফেসবুকে তোপ দাগলেন বাবুল
বছর ছাব্বিশের সনাতন পেশায় রাজমিস্ত্রি। এ ছাড়া বিঘে তিনেক জমি আছে। সেখানে চাষের কাজও করেন। এ সবে সংসার চলে যায়। বাবা ঝুনু চাষের কাজে সাহায্য করেন ছেলেকে। বাড়িতে সদস্য বলতে সনাতনের স্ত্রী সরস্বতী, মা যমুনা, আর তিন বছরের মেয়ে সুস্মিতা। গ্রামের এত লোক আজ তাদের বাড়িতে, দেখে অবাক হচ্ছে সে।
অমিত নিরামিষাশী। সনাতন জানালেন, তাই খাবার পাতে থাকবে, স্যালাড, ভাত, ডাল, রুটি, পটলভাজা, উচ্ছেভাজা, ঢ্যাঁড়শভাজা, খোসলাশাকভাজা, শুক্ত, ফুলকপির তরকারি, চাটনি, পাঁপড়, দই এবং মিষ্টি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে খাবার পরিবেশন করা হবে কলাপাতায়। তাঁর কথায়, ‘‘মা আর সরস্বতীই রান্না করে খাওয়াবে ওঁকে।’’
অমিতের মতো ভিভিআইপি-কে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবেন, ভেবেই উচ্ছ্বসিত যমুনা। বললেন, ‘‘বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে রান্না করব শনিবার। আমাদের হাতের রান্না উনি খাবেন ভাবতেই পারছি না!’’ আর সরস্বতী বলছেন, ‘‘ওঁর মতো এক জন আমাদের বাড়িতে অতিথি হয়ে আসছেন, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! অতিথিদের সঙ্গে বাড়ির লোকেদের রান্নাও একসঙ্গে হবে। খুবই আনন্দ হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: লকডাউন যাঁদের যৌনকর্মী বানাল, সন্ধ্যা-মালতি-শ্যামলীদের কথা
বাড়িতে আসছেন অমিতের মতো এমন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, কোনও দাবিদাওয়ার কথা বলবেন? জবাবে অষ্টম শ্রেণি পাশ সনাতন বলছেন, ‘‘আমার কোনও দাবি নেই। যদি কথা বলার মতো সুযোগ পাই, তা হলে গ্রামের উন্নয়নের জন্য বলব ওঁকে।’’
আতিথেয়তার পসরা নিয়ে আপাতত অমিতের অপেক্ষায় কর্ণগড়ের ‘সিংহ’দুয়ার।