সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে শাহের পাশেই শুভেন্দু। ছবি: পিটিআই।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারীকেই কি পছন্দ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের? তাঁর সাম্প্রতিক বঙ্গ সফরের পর এমনই গুঞ্জন দানা বেঁধেছে রাজ্য বিজেপির। এর আগেও একাধিক বার শুভেন্দুর প্রতি তাঁর আস্থা জানিয়েছিলেন শাহ। শুভেন্দুও শাহের প্রতি তাঁর আনুগত্য ব্যক্ত করেছিলেন। শাহের এ বারের বঙ্গ সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুভেন্দুর গুরুত্ব চোখে পড়েছে অনেকের।
রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষে সোমবার রাতে কলকাতায় আসেন শাহ। দেখা যায় বিমানবন্দরে নেমে তিনি অপেক্ষমান বিজেপি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একমাত্র শুভেন্দুর কাঁধ চাপড়ে দিচ্ছেন। এর পর শাহের গোটা সফরেই সঙ্গী ছিলেন শুভেন্দু। বিকেলে সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে কিংবা মঞ্চে শাহের পাশেই ছিলেন শুভেন্দু। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জায়গা হয়েছিল তফাতে। এমনকি বক্তৃতা শুরুর সময় সবার আগে সম্বোধন করেন শুভেন্দুকেই। সূত্রের খবর, ঝটিতি বঙ্গ সফরের মাঝে নিউ টাউনের এক হোটেলে ঘণ্টাখানেকের দলীয় বৈঠকে শাহ জানান শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতাকে জেলায় জেলায় আরও বেশি প্রচারের দায়িত্ব নিতে হবে।
২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুর কলেজিয়েট ময়দানে শাহের হাত থেকে পতাকা নিয়েই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। তারপর থেকে একাধিক বার শুভেন্দুর প্রতি শাহের আস্থার ছবি ধরা পড়েছে। বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর একাধিক বার দিল্লি গিয়ে শাহের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন শুভেন্দু। যা নিয়ে দলের অন্দরে গুঞ্জন হলেও শীর্ষ নেতারা তা উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি সূত্রের দাবি, যাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন শীর্ষ নেতারা তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনাদের মধ্যে কারা "সিটিং চিফ মিনিস্টার" কে হারাতে পারবেন? সম্প্রতি সিউড়িতে জনসভা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যেই শুভেন্দুর প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দিদির দাদাগিরির বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে বিজেপির পরিষদীয় দল মাথা উঁচু করে লড়াই করছে।
শুভেন্দু দুর্নীতির অভিযোগে বারংবার সরাসরি নিশানা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমনকি ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগানকে দলের ভিতরেও চালু করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই চাঁচাছোলা আক্রমণ যে শাহের অনুমোদন পেয়েছে,তা শুভেন্দুকে তাঁর দরাজ শংসাপত্র দেওয়া থেকেই অনেকটা স্পষ্ট।
এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি তৃণমূল বিরোধী লড়াইয়ে বঙ্গ বিজেপির অধিনায়ক শুভেন্দু? যদিও দলের মধ্যেই এ নিয়ে মতভেদ আছে। তৃণমূলকে হারাতে তাঁর একের বিরুদ্ধে এক অর্থাৎ কংগ্রেস, সিপিএম-সহ সকলকে নিয়ে লড়াইয়ের যে আহ্বান, তা দলেই ধাক্কা খেয়েছে। পঞ্চায়েত প্রস্তুতি বৈঠকে দলের আদি গোষ্ঠীর নেতারা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিই লড়বে। একের বিরুদ্ধে এক, লড়াই করতে হলে প্রতীক নিতে হবে বিজেপিরই। ফলে নিচু তলায় অলিখিত সমঝোতার ইঙ্গিত কার্যত খারিজ হয়ে যায় উপর তলার নির্দেশে। এমনকি শুভেন্দুকে দলীয় বৈঠকে শাহের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গও সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন সুকান্ত। তিনি বলেন, এমন কোনও বৈঠকই হয়নি। তাই এমন কোনও প্রসঙ্গ আসার প্রশ্নই ওঠে না। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা উনি(শুভেন্দু)। তাই বিধানসভার মধ্যে লড়াই ওঁর নেতৃত্বে হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য বিজেপির অন্দরের এই গুঞ্জন সম্পর্কে বলেন, ‘‘বিজেপির এই মনোভাব যেন বদল না হয়। তা হলে দলটা যে দুর্নীতিগ্রস্তদের আখড়া তা আর আমাদের বলতে হবে না। সিবিআইয়ের এফআইআর-এ নাম থাকা এক জনকে সামনে রেখে সে কাজটা তারাই সেরে রাখবে।’’