উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য এমনই শুভেচ্ছাবার্তা শিক্ষিকা তথা বারাসত পুরসভার কাউন্সিলর চৈতালি ভট্টাচার্যের। — নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সেই বার্তায় শিক্ষিকা হিসাবে নিজের নিয়োগ সালটি উল্লেখ করে দিয়েছেন কাউন্সিলর। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির এই রমরমা বাজারে এমন অভিনব শুভেচ্ছাবার্তা নজর কেড়েছে জনতার। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর বলছেন, তাঁর সম্পর্কে জনসাধারণের সামনে ‘স্বচ্ছ’ ধারণা দিতে চেয়েছেন তিনি।
ঘটনা ঘটেছে কলকাতার অদূরে বারাসতে। কাউন্সিলরের নাম চৈতালি ভট্টাচার্য। বারাসত পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি। বৃহস্পতিবার চৈতালিকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজের সম্পর্কে জনসাধারণের সামনে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তা-ই এই অভিনব ভাবনা।
প্রসঙ্গত, চৈতালি নির্দল কাউন্সিলর। কোনও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রতীকে তিনি পুরভোটে ভোট লড়েননি। তবে জিতেছেন।
শুভেচ্ছাবার্তায় চৈতালি লিখেছেন— ‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সকলের পরীক্ষা ভাল হোক এই আশা রাখি।’ বার্তার শেষে লেখা, ‘কাউন্সিলর চৈতালি ভট্টাচার্য, বারাসত ২৮ নম্বর ওয়ার্ড, শিক্ষিকা (২০০৬ সালে নিয়োগ)।’ অর্থাৎ, যে সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ নিয়ে ‘অস্বচ্ছতা’র ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠছে এবং ইদানীং প্রকাশ্যে আসছে, তিনি সেই সময়কালে শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত হননি। তাঁর নিয়োগ সেই সময়কালের অনেক আগে।
২০১৬ সালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম এবং দশমে নিয়োগ প্রক্রিয়া আতশকাচের তলায়। ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট নিয়েও উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। এই আবহে শুভেচ্ছাবার্তায় বন্ধনীর মধ্যে চৈতালি তাঁর নিয়োগের সালটি লিখে দিয়ে কৌতূহল তৈরি করেছেন বইকি! কেন এমন লিখলেন? চৈতালির বক্তব্য, ‘‘আমার এলাকার মানুষকে আমার নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ভাবে জানানোর জন্যই এটা পোস্ট করেছি। লোকে আমাকে আরও ভাল করে চিনুন, জানুন। সেই জন্য দিয়েছি।’’ অর্থাৎ, তাঁর এলাকার মানুষ যাতে জানতে এবং বুঝতে পারেন যে, নিয়োগ দুর্নীতির ফলে তাঁর নিয়োগ হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর নিয়োগ হয়েছে ওই সময়ের অন্তত ১০ বছর আগে, ২০০৬ সালে।
তবে উল্টো দাবিও রয়েছে। গত বছর বারাসতের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাউন্সিলর হয়েছেন চৈতালি। সেই সময় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দোলন বিশ্বাস। লড়াইয়ে ছিলেন বামফ্রন্টের প্রার্থীও। দোলন চাকরি করতেন স্কুলের করণিক পদে। কিন্তু সম্প্রতি সি গ্রুপের যে নিয়োগ তালিকা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট, তাতে নাম রয়েছে সেই দোলনের। ফলে এমন ‘ভিন্নধর্মী’ শুভেচ্ছাবার্তার মাধ্যমে চৈতালি তাঁর ভোটের লড়াইয়ে এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকেই কি ইঙ্গিত করেছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে বারাসতের অশ্বিনীপল্লির বাসিন্দা শিক্ষিকা চৈতালি বলছেন, ‘‘শুনেছি ওঁর চাকরি গিয়েছে। তবে এটা ওঁকে আক্রমণ করতে করা নয়। কারণ, ওঁর নিয়োগ কবে তা আমি জানি না।’’ নিয়োগ বিতর্কের মধ্যে বাম আমলে এমন দুর্নীতির কথাও তুলে আনছেন অনেকে। যা শুনে চৈতালির পাল্টা দাবি, ‘‘আগের আমলের কয়েক জনকে দিয়ে পুরোটা বিচার করা যায় না।’’