জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বাঁ দিকে) এবং সব্যসাচী দত্ত। —ফাইল চিত্র।
বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে হাজির হন ইডি কর্তারা। ঘটনাচক্রে, যখন রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’ মামলায় জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকেরা, তখনই ‘বিজয়া করতে’ মন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছে যান বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহ রায় এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি রঞ্জন পোদ্দার। ঢুকতে বাধা পাওয়ার পরে তুলসীর অভিযোগ, “আমাদের ঐতিহ্য মেনেই গুরুজনের সঙ্গে বিজয়া করতে এসেছিলাম। কিন্তু এরা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে আঘাত হানছে।”
বৃহস্পতিবার হঠাৎই জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়ির সামনে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথমে হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির সামনে হাজির হন সব্যসাচী। তার পরেই সেখানে চলে আসেন তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর। তাঁদের বাড়ির ভিতরে ঢুকতে বাধা দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। সব্যসাচীদের বক্তব্য, বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে সব্যসাচী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “আমি বুধবার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করে বিজয়া দশমী সেরে এসেছি। বৃহস্পতিবার সকালে গিয়েছিলাম বালুদার বাড়িতে। সেখানে পৌঁছে তো আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়!” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি ইডি তল্লাশির ব্যাপারে কিছু জানতেন না? জবাবে সব্যসাচী বলেন, “না না, আমি কিছুই জানতাম না। সকাল সাড়ে ৯টা-১০টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে আমি বেরিয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, জ্যোতিপ্রিয় তৃণমূলের অন্দরে ‘বালুদা’ হিসাবেও পরিচিত।
জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমেও সব্যসাচী জানান যে, ইডি-তল্লাশির ব্যাপারে তাঁর কিছুই জানা ছিল না। বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় জ্যোতিপ্রিয়কে আমন্ত্রণ জানাতেই তিনি সেখানে গিয়েছেন বলে জানান বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান। মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকতে বাধা পেয়ে মূল ফটকের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকেন সব্যসাচী এবং অন্য দুই কাউন্সিলর। দেখা যায়, তাঁদের আসার কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বুঝিয়ে বলছেন সব্যসাচীরা। তার পরেও অবশ্য ভিতরে ঢোকার প্রবেশাধিকার মেলেনি। তার পরই নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয় দুই কাউন্সিলরের। বাঙালির ঐতিহ্য মেনে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অবশ্য ইডি-তল্লাশির নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে কি না, এই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি সব্যসাচী। জানিয়েছেন, তিনি কেবল ‘বিজয়া করতে’ই এসেছিলেন। বিকেলে জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে যান বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডল এবং তৃণমূল কাউন্সিলর মিনু দাস চক্রবর্তী।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর আপ্ত সহায়কের বাড়িতে টানা তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকেরা। রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’ মামলায় উঠে এসেছে বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের নাম। ইডি সূত্রে খবর, রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পরেই নাম উঠে এসেছে জ্যোতিপ্রিয়ের। সল্টলেকের বিসি ব্লকে পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে (বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫) বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি।
জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির পাশাপাশি তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দের নাগেরবাজারের ফ্ল্যাটেও পৌঁছে গিয়েছে ইডি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ সেখানে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দল। নাগেরবাজারে দু’টি ফ্ল্যাটে গিয়েছে ইডি। একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ভগবতী পার্ক এলাকায় এবং দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটি রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। সূত্রের খবর, দু’টি ফ্ল্যাটেই পালা করে অমিত থাকেন। তবে দু’টি ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে।
( এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় অনবধানবশত সব্যসাচী দত্তকে বিধাননগর পুরসভার মেয়র বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী)