নবদ্বীপে আগমেশ্বরী কালী বিসর্জন হয়েছে সাঙেই। জগদ্ধাত্রী পুজোতেও কি একই ছবি দেখা যাবে? নিজস্ব চিত্র।
নবদ্বীপ-শান্তিপুরে যদি সাঙে বিসর্জন হতে পারে, কৃষ্ণনগরে কেন হবে না? কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানে প্রশাসন এ বারও সাং নিষিদ্ধ করায় এই প্রশ্নই তুলতে শুরু করেছেন নাগরিকদরে একটা বড় অংশ। যদিও সোমবারও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, হাই কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে তার বাইরে কোনও ভাবেই যাওয়া যাবে না।
কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী ভাসানে দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য বেহারাদের কাঁধে বওয়া বাঁশের মাচা বা সাঙে প্রতিমা বহন। প্রায় সমস্ত প্রতিমাকে শোভাযাত্রা করে রাজবাড়ির সামনে থেকে ঘুরিয়ে আনাও দস্তুর। কিন্তু করোনার দাপটে সেই প্রথা গত বছরই ধাক্কা খেয়েছিল। কারণ হাই কোর্ট ভাসানের শোভাযাত্রা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে সাং বা প্রতিমা রাজবাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। যা নিয়ে কৃষ্ণনাগরিকদের একটা বড় অংশ কার্যত বিদ্রোহ করেন। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সাঙের দাবি হাই কোর্টে জানায় বেশ কিছু বারোয়ারি। কিন্তু আদালত অনড় থাকে।
অনেকেরই আশা ছিল, এ বার পরিস্থিতি অনেকটা শুধরে যাওয়ায় প্রথামাফিক বিসর্জন করা যাবে। কিন্তু এ বারও প্রশাসনের তরফে সেই একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার রবীন্দ্র ভবনে জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে সমন্বয় বৈঠকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়ে দেন, এ বারও হাই কোর্টের নির্দেশের বাইরে তাঁরা যাবেন না। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পুজো কমিটিগুলির লোকজন। আর তখনই ওঠে কালীপুজোর ভাসানে নবদ্বীপ ও শান্তিপুরে বিনা বাধায় সাং ব্যবহার করার প্রসঙ্গ।
এ বার শান্তিপুরে মহিষখাগি ও নবদ্বীপে আগমেশ্বরী কালীর ভাসান হয়েছে সাঙে। সেই প্রসঙ্গ তুলে পুজো কমিটির কর্তারা প্রশ্ন তোলেন, সে ক্ষেত্রে কৃষ্ণনগর নিষেধ কেন? ওই দু’টি শহরে সাং বার করার অনুমতি কি প্রশাসন দিয়েছিল? গত বছর বেশ রাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হরিজন পল্লির ‘রানিমা’ প্রতিমাকে সাঙে নিয়ে যাওয়ায় আইনি পদক্ষেপ করেছিল পুলিশ। তা হলে সেই একই কাজ করেও কেন পার পেয়ে যাবে নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের ওই দুটি পুজো কমিটি, এই প্রশ্ন তোলা হয়।
এই প্রশ্নের মুখে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যান পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। অস্বস্তিতে শাসক দল তৃণমূলও। কারণ সামনে পুরভোট। তার আগে শহরের মানুষের আবেগের বিরুদ্ধে যাওয়া যে বিপজ্জনক হয়ে পড়তে পারে তা নেতারা বিলক্ষণ জানেন। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “কঠিন সমস্যা। এক দিকে রাজ্য সরকার ও হাই কোর্টের নির্দেশ, আর অন্য দিকে শহরের মানুষের আবেগ। আমরা কোন দিকে যাই?”
জগদ্ধাত্রী ভাসানে সাঙের ব্যবহার নিয়ে শাসক দল যে বিভ্রান্ত তা স্পষ্ট হয়ে যায় রবিবারের বৈঠকেই। সেখানে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জয়ন্ত সাহা শহরের আবেগ ও ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে সাং ব্যবহার এবং প্রতিমা রাজবাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে দেওয়ার সপক্ষে আর্জি জানান। আবার একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে শহরের বাসিন্দা তথা কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস সওয়াল করেন, কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে কোনও ভাবেই এটা সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও কোতোয়ালি থানার আইসি-কে নিয়ে একটি ‘কোর কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, হাই কোর্টের রায় মেনেই যতটা সম্ভব ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করা যায়, তা করা হবে। তবে তাতে সাং বা রাজবাড়ি যাওয়ার অনুমতি মেলার সম্ভাবনা কম। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, “হাই কোর্টের নির্দেশের বাইরে কোনও ভাবেই যাওয়া যাবে না। তবে তা মেনে যতটা সম্ভব ঐতিহ্য ধরে রাখা যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার চেষ্টা করছি।” তা হলে কী ভাবে নবদ্বীপে সাঙে আগমেশ্বরী বিসর্জন হল? পুলিশ সুপার বলেন, “নবদ্বীপ থানার আইসি-কে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”