ফাইল চিত্র।
শাপে কি বর হল! কোভিড আবহে ডেঙ্গি দোসর হলে কী হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল স্বাস্থ্য ভবন। অগস্ট শেষে পরিসংখ্যান বলছে গত বছরের তুলনায় রাজ্যে আশ্চর্যজনক ভাবে ডেঙ্গি কেসের সংখ্যা কমেছে। যার প্রেক্ষিতে করোনার দাপটে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব ফিকে হল কি না, সেই প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
ডেঙ্গি সংক্রমণের নিরিখে ২৩টি জেলার মধ্যে গত কয়েকবছর ধরে প্রথম স্থান দখল করে রেখেছে উত্তর ২৪ পরগনা। এরপর আক্রান্তের সংখ্যার মাপকাঠিতে উল্লেখযোগ্য জেলাগুলি হল, কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার শহরাঞ্চলে গত বছর ২৯ অগস্ট পর্যন্ত ৩০২৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানে এ বছর ২৯ অগস্ট পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১১৩ জন! ওই সময়ে জেলার গ্রামীণ এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯৪৬। এ বছর সেই সংখ্যা হল ২২! দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত বছর এসময় সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিনশো। এবছর মাত্র ৪৯ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ পেয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জেলার যে সকল ব্লকে ডেঙ্গির প্রবণতা বেশি ছিল সেখানে এ বছর কোভিডের প্রভাব বেশি।’’ কলকাতাতেও দু’হাজার ঊনিশ সালের তুলনায় পঞ্চাশ শতাংশ কেস কম বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
প্রত্যক্ষ না হলেও করোনার পরোক্ষ প্রভাবের কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবশিস বিশ্বাস। তিনি জানান, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৩৯০ মিলিয়ন ডেঙ্গি কেস হয়। এর মধ্যে ন’কোটি ৬০ লক্ষের ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা যায়। ৭৫ শতাংশ উপসর্গহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে ডেঙ্গি ছড়ায় বেশি। মুখ্য পতঙ্গবিদের বক্তব্য, গত ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় মানুষের মাধ্যমে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গি সংক্রমণের গতিও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘সংক্রমণ এড়াতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাওয়ানোর সুফলও এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কি না দেখা উচিত।’’
আরও পড়ুন: এক না একাধিক, ভ্যাকসিনের ক’টি ডোজ রুখতে পারে কোভিড?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই জানান, কোভিড আবহেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারিতে ছেদ পড়েনি, সেটাও একটা কারণ হতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রীতম রায় জানান, একই ব্যক্তি করোনা এবং ডেঙ্গির শিকার হয়েছেন সেই নজির রয়েছে। ফলে সহাবস্থান তো হচ্ছে! তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-ভীতির কারণে মানুষের মধ্যে জ্বর লুকনোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ফলে এ বছরের পরিসংখ্যান থেকে সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল।’’
আরও পড়ুন: করোনায় আশার ঝিলিক, রাজ্যে টানা এক সপ্তাহ কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা
এ প্রসঙ্গে সিএসআরআই-ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির সংক্রমক রোগ এবং ইমিউনোলজি বিভাগের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট শুভজিৎ বিশ্বাস জানান, সম্প্রতি ‘ক্লিনিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেস’ নামে একটি গবেষণাপত্রে ইজরায়েলের তথ্য তুলে দেখানো হয়েছে। ২২ শতাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ডেঙ্গির সেরাম ব্যবহার করা হলেও তা কোভিড পজ়িটিভ দেখিয়েছে। আবার কোভিডের সেরাম ব্যবহার করে একই রকম ভাবে ডেঙ্গি পজ়িটিভেরও দেখা মিলেছে। শুভজিৎবাবু জানান, গত জুলাইয়ে তিন বছর আগের ডেঙ্গি সেরাম ব্যবহার করে কোভিড অ্যান্টিবডি টেস্ট পজ়িটিভের সন্ধান তাঁরাও পেয়েছিলেন। ‘মেড আর্কাইভে’ তা প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘দু’টি ভাইরাস সম্পূর্ণ ভিন্ন গোত্রের হলেও এদের বহিরাবরণের মধ্যে একটা আকারগত সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে কোভিডের কারণে দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ডেঙ্গির সংক্রমণ বা ভয়াবহতা কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতেই পারে। আরও বেশি সংখ্যক পরীক্ষার ফল দেখে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব।’’
তবে এই পরিসংখ্যানে এখনই আশ্বস্ত হতে চাইছেন না স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। তাঁদের বক্তব্য, অক্টোবর না পেরোলে বিশ্বাস নেই!