মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ‘যোগ্যতা আছে’ বলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলেছে। মমতা তাঁর সম্পর্কে অমর্ত্যের এই মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। শুধু দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘তাঁর উপদেশ আমাদের কাছে আদেশ।’’ রাজ্যের বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবে মমতা সম্পর্কে অমর্ত্যের মন্তব্যকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেনি।
শনিবার পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য এ কথাও বলেছেন, ‘‘মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা থাকলেও বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে সংহত করে তিনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না, তা এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়।’’ এই সূত্রেই তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি বিরোধী মুখ হিসেবে দেশের মানুষের কাছে বার বারই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ মমতা দিয়েছেন।’’
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘অমর্ত্য সেন যদি এই স্বপ্ন দেখেন ওঁকে বলব, আপনি মমতাকে আশীর্বাদ করুন।’’ অন্য বিরোধী নেতাদের কার সঙ্গে মমতার এখন কতটা যোগাযোগ আছে সে প্রশ্নও তোলেন দিলীপ। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘সারা দেশের রাজনীতিতে যে কয়েকটা নাম নিয়ে প্রচার ও আলোচনা হয়, তার মধ্যে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই আছেন। তার কারণ অর্থ আর প্রচার। কিন্তু মূল প্রশ্ন হল, বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা। তৃণমূলের ভূমিকা কি সেই লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?’’ বরং তাঁর দাবি, নানা রাজ্যে বারবার বিজেপিকে সাহায্যই করেছে তৃণমূল।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন মমতাও দেখেন। অমর্ত্যবাবু ঠিকই বলেছেন যে, বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ এবং বিভিন্ন শক্তিকে তৃণমূলনেত্রী এক জায়গায় আনতে পারবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।’’
তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ‘যোগ্যতা’ সম্পর্কে মমতা অমর্ত্যের মন্তব্যের সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তিনি বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেন বিশ্ববরেণ্য পণ্ডিত, আমাদের অন্যতম গর্ব। তাঁর পর্যবেক্ষণ আমাদের পথ দেখায়। তাঁর উপদেশ আমাদের কাছে আদেশ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চয় সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।’’
সামগ্রিক রাজনীতি নিয়ে অমর্ত্যের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান এবং গুরুত্ব অমর্ত্য সেন বুঝেছেন বলেই এ ব্যাপারে তিনি তাঁর বক্তব্য জানিয়ে সজাগ করতে চেয়েছেন। বিজেপি শুধু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরেই আঘাত হানছে না যে সব রাজ্যে বিরোধী দলের সরকার রয়েছে তারা সেখানে নানা ভাবে দলীয় এবং দিল্লির ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তাদের উপর ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ হানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অমর্ত্য সেন তাঁর পর্যবেক্ষণের মধ্যে বিরোধী দলগুলির আগামী কর্তব্য সম্পর্কেও কিছুটা দিকনির্দেশ করেছেন। সেখান থেকে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করি।’’