তালাবন্ধ কন্যাশ্রী পাঠাগার। বেলিয়াবেড়ায়। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প কন্যাশ্রী বিশ্বের দরবারেও সমাদৃত। এই প্রকল্পের উপভোক্তা স্কুলছাত্রীদের জন্যই বছর চারেক আগে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়ার তপসিয়ায় সরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছিল কন্যাশ্রী পাঠাগার। সেটিই রাজ্যের প্রথম কন্যাশ্রী পাঠাগার।
তবে সেই পাঠাগারে স্থায়ী গ্রন্থাগারিক নেই। নেই বরাদ্দও। ফলে, তালা পড়েছে পাঠাগারে। হাজার দু’য়েক বই নিয়ে যাওয়া হয়েছে ব্লক অফিসের একটি ঘরে। সেখানেই ছাত্রীরা এসে বই দেওয়া-নেওয়া করে। কিন্তু বসে পড়ার জো নেই। পাঠাগার খোলা রাখার সময়ও কমেছে। কিশোরীবেলায় পড়াশোনায় দাঁড়ি টেনে বিয়ে আর তারপর সংসারের জাঁতাকল— জঙ্গলমহলের বহু মেয়ের জীবন এই আবর্তে থমকে যায়। ইচ্ছে, যোগ্যতা থাকলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ মেলে না। গ্রামাঞ্চলের কন্যাশ্রীদের অনেকে অভাবের কারণে টিউশন নিতে পারে না। আবার উপযুক্ত গৃহশিক্ষকও মেলে না প্রান্তিক গ্রামে। এই সব সমস্যা মেটাতেই ২০১৮ সালের ২১ জুন গোপীবল্লভপুর-২ (বেলিয়াবেড়া) ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে তপসিয়ায় কন্যাশ্রী পাঠাগার চালু হয়। পুরনো কমিউনিটি হল সংস্কার করে গড়ে তোলা হয় কন্যাশ্রী মঞ্চ। সেখানে এখন বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ চলে। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানও হয়। কন্যাশ্রীদের উৎসর্গ করা ওই ভবনেই ২০১৮-র জুনে কন্যাশ্রী পাঠাগার ও রিডিং রুম চালু হয়েছিল।
সাক্ষরতা প্রকল্প এবং জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যানের টাকায় বই, আলমারি, চেয়ার-টেবিল কেনা হয়। বিভিন্ন স্কুলের প্রায় পাঁচশো কন্যাশ্রী পাঠাগারের সদস্য হয়। পাঠ্যবই, সহায়ক বই, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই, গল্পের রকমারি বই ছাড়াও গোড়ায় বিভিন্ন পাক্ষিক ও মাসিক কিশোর পত্রপত্রিকা ও সাময়িকপত্র কেনা হত। প্রশাসনের বরাদ্দ মিলত। কয়েকজন বই দানও করেছিলেন।
সূত্রের খবর, ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে পাঠাগার চালু হলেও গ্রন্থাগার দফতরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ফলে পাঠাগারটি গ্রন্থাগার দফতরের অধীনে নয়। ব্লক থেকে একজন অস্থায়ী মহিলা গ্রন্থাগারিক ও এক জন অস্থায়ী সহকারী নিয়োগ করা হয়েছিল। ব্লকের কনটিনজেন্সি ফান্ড থেকে তাঁদের সাম্মানিক দেওয়া হত। গ্রন্থাগারিক কাজ ছেড়েছেন। সহকারী মীরা রানাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘‘পাঠাগারের কোনও বরাদ্দ নেই। ঝাঁট দেওয়ার লোকও নেই। সবই আমিই করতাম। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকায় পাঠাগারটি চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই গত বছর ব্লক প্রশাসন থেকে বইপত্র নিয়ে গিয়েছে।’’
পড়ুয়ারা জানাচ্ছে, আগে পাঠাগারটি মঙ্গল থেকে শনি বিকেল ৩টে থেকে ৭টা এবং রবিবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকত। এখন ব্লক কার্যালয়ের ঘরে ছুটির দিন বাদে অফিস টাইমে পাঠাগার খোলা থাকে। সেখানে ছাত্ররাও বই নিতে পারে। এই কন্যাশ্রী পাঠাগারের পরিচালন সমিতির আহ্বায়ক করা হয়েছিল বেলিয়াবেড়া কেসিএম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক সুব্রত মহাপাত্রকে। তিনি বলছেন, ‘‘উদ্যোগটি খুবই ভাল ছিল। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে পাঠাগার চালানো যাচ্ছে না।’’ বেলিয়াবেড়ার বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ মানছেন, ‘‘পাঠাগারটির জন্য কোনও বরাদ্দ নেই।’’ আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে আসছেন। স্থানীয়রা চান, কন্যাশ্রী পাঠাগারের পুনরুজ্জীবনে হস্তক্ষেপ করুক রাজ্য সরকার।