মহম্মদবাজারে সিপিএমের মিছিল। নিজস্ব চিত্র
কয়লা খনির সমর্থনে হওয়া শাসকদলের মিছিল ‘আক্রান্ত’ হয়েছিল মহম্মদবাজার থানার দেওয়ানগঞ্জে। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় অভিযোগের তির স্থানীয় কিছু আদিবাসী মহিলাদের দিকে। তবে, মিছিল আটকাতে ‘রুখে’ দাঁড়ানোয় ওই মহিলাদের উপরেও পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা, ডেউচা-পাঁচামি আদিবাসী জনজাতি ভূমিরক্ষা কমিটির পশাপাশি প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর দাবি, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। জনা ২০-২৫ মহিলার উপরে কেন আক্রমণ করবে পুলিশ? আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ দু’পক্ষকে সরিয়ে দিয়েছিল কেবল।’’ কিন্তু ঘটনা হল, প্রশাসন এ নিয়ে আর বিশেষ জলঘোলা করতে চাইছে না। বরং আলোচনার পথেই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী।
‘শান্তি বিঘ্নকারী শক্তি দূর হটো’ স্লোগান তুলে বৃহস্পতিবার বিকেলে ডেউচার দেওয়ানগঞ্জে মিছিল করে তৃণমূল। তখনই আদিবাসী মহিলাদের একাংশ লাঠি, ঝাঁটা, বাঁশ, ইটের টুকরো হাতে মিছিলকে বাধা দেন। মহিলাদের তাড়া খেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। কয়েক জন তৃণমূল নেতা আটকে পড়েন। তাঁদের উদ্ধারে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় যায়। স্থানীয় আদিবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তখনই প্রতিবাদে শামিল মহিলাদের মারধর করে পুলিশ। জখম হন কমপক্ষে ১৫ জন মহিলা।
ডেউচা-পাঁচামি আদিবাসী জনজাতি ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্য সুনীল মুর্মুর অভিযোগ, ‘‘খনির বিরুদ্ধে যাতে কোনও আন্দোলন সংগঠিত না-হয়, তার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। গত শনিবার সভা করায় আমাদের সাত জনের নামে মামলা করেছিল মহম্মদবাজার থানা। জামিন নিতে আদালতে গিয়েছিলাম। এসে শুনি, শাসক দলের মিছিলের প্রতিবাদ করার জন্য মহিলাদের মারধর করা হয়েছে।’’ কমিটির আরও অভিযোগ, এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে বাধা দেওয়ায় আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অসুবিধা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মোটরবাইকে চাপিয়ে ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের মল্লারপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সবাইকেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুটা তাড়াহুড়ো করে মিছিল করতে গিয়েই পরিস্থিতি জটিল হল বলে মনে করছেন তৃণমূলের নিচুতলার নেতারা। দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল শুক্রবার বলেন, ‘‘আদিবাসী ভাইবোনেদের দু’-এক জন জমি না-দেওয়ার জন্য বেরিয়ে এসেছিলেন। আদিবাসীদের বুঝিয়ে সমস্ত ব্যাপারটি ঠিক করে নিতে হবে।’’
জেলাশাসক বিধান রায় এবং জেলা পুলিশ সুপার এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, কিছু বহিরাগত এসে এলাকায় অশান্তির সৃষ্টি করছে। এলাকার লোকজনকেই তাঁদের ভালমন্দ বুঝতে দেওয়া উচিত। ডেউচা-পাঁচামি খনির জন্য গঠিত সরকার মনোনীত কমিটির প্রধান, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যে কোনও বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে এমন ছোট-বড় আন্দোলন হবে। সেটা দমনে রাজনৈতিক ভাবে কোনও পেশিশক্তির প্রদর্শন হয়ে থাকলে, সেটা অনভিপ্রেত। আর যাঁরা মিছিল আটকেছেন তাঁদের উদ্দেশে বলব, একটু ধৈর্য ধরুন। সরকার ইতিবাচক ভাবেই প্রকল্প রূপায়ণ করতে চাইছে।’’