স্ট্রংরুম ও গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। আসানসোলের ধাদকায় পলিটেকনিক কলেজ চত্বরে রবিবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
গত বিধানসভা ভোটে তাদের বিশেষ দেখা মেলেনি। কিন্তু পুরভোটের মাঠে ফের দেখা গিয়েছে তাদের— অভিযোগ বিরোধী ও নাগরিকদের একাংশের। তাঁদের দাবি, বেআইনি কয়লা কারবারে জড়িত পরিচিত ওই মুখেরা এ বার আসানসোল পুরভোটে সক্রিয় ছিল। তৃণমূলের হয়ে তারা কাজ করেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তৃণমূল অবশ্য তাতে আমল দেয়নি।
আসানসোলের খনি অঞ্চলে ভোটের মাঠে কয়লা মাফিয়াদের দাপটের অভিযোগ গত প্রায় আড়াই দশক ধরে বারবারই উঠেছে। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে সে ধারায় ব্যতিক্রম নজরে পড়েছিল বলে বিরোধীদের একাংশের মত। ওই ভোটের আগে থেকে বেআইনি কয়লার কারবারের তদন্তে সিবিআইয়ের তৎপরতা দেখা যায়। বেআইনি কয়লা কারবারেও ভাটার টান দেখা যায় বলে দাবি এলাকা সূত্রের। গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষে কয়লা ‘সিন্ডিকেটের মাথা’ বলে পরিচিত অনুপ মাজি ওরফে লালার ঘনিষ্ঠ চার জনকে গ্রেফতারও করে সিবিআই।
এই পরিস্থিতিতে, আসানসোল পুরভোটে কয়লা ‘মাফিয়া’দের দেখা মিলবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, শনিবার ভোট শুরু হতেই দেখা যায়, জামুড়িয়ার ৩ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বুথগুলিতে এলাকায় পরিচিত এক কয়লা কারবারির শাগরেদরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরসভার অন্তত ৪০ শতাংশ বুথ ওই কারবারিরা দখল করে বলে অভিযোগ। তবে নাগরিকদের একাংশের দাবি, অতীতে শাসক দলের হয়ে মিছিলে লোক পাঠানো, তহবিল জোগানো, ভোটের দিন বুথ দখল-সহ নানা ভূমিকায় দেখা যেত কয়লা মাফিয়াদের। এ বার শুধু বুথ ‘দখলে’ দেখা গিয়েছে তাদের।
সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বীরভূম, পাণ্ডবেশ্বর থেকে মাফিয়ারা রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ার একাংশে, বারাবনি, অন্ডাল, রানিগঞ্জের গ্রামীণ এলাকার কিছু মাফিয়া আসানসোল দক্ষিণ, কুলটি ও আসানসোল উত্তর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের হয়ে ভোট লুট করেছে। আগে থেকে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়ি, হোটেল, অতিথিশালায় জড়ো করেছিল তৃণমূল।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোডুইয়েরও অভিযোগ, “কয়লা, লোহা, বালি চোরদের সঙ্গী করে তৃণমূল নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে।” তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। দলের সঙ্গে মাফিয়াদের কোনও যোগ নেই। কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। আমরা তা বন্ধ করেছি।” বাম আমলে কয়লা মাফিয়াদের উপস্থিতি অস্বীকার করেন সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী।
সিবিআই অভিযানের পরে, এখনও কয়লা কারবারে ভাটার টান বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। সে সূত্রে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে কারবারিদের দেখা যায়নি। এই কয়েক মাসের মধ্যে কী এমন ঘটল যে, ফের তাদের দেখা গেল রাজনীতির আঙিনায়? নানা সূত্রের দাবি, কারবারিদের আশা, অন্দরের কিছু সমস্যার জন্য তাদের কারবার সে ভাবে চলছে না। পুরভোটের ফলপ্রকাশের পরে ফের স্বমহিমায় ফিরতে চাইছে তারা। তাই মাঠে নামা।
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তমের যদিও দাবি, “ভোটের দিন কয়লা মাফিয়াদের উপস্থিতির অভিযোগ কেউ আমাদের জানাননি। কোথাও অশান্তির খবর পেলেই, পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে।”