স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজেন পাণ্ডে। ফাইল চিত্র।
প্রকাশ্যে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল অক্টোবরের প্রথম সন্ধ্যায় জারি হওয়া একটি আদেশনামায়। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে চলা সেই নাটকীয় টানাপড়েনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করল সহ-উপাচার্যের ‘পত্রবোমা’। স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে উপাচার্য রাজেন পাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে হেনস্থা, মানসিক নিপীড়ন, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানোর মতো গুরুতর অভিযোগ করেছেন সহ-উপাচার্য কাকলি রায় বসু।
গত ১ অক্টোবর পুনর্নিয়োগপত্র ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে সহ-উপাচার্যকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে একটি আদেশনামা জারি করেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ বিষয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তের মতামত চেয়েছিলেন উপাচার্য। এজি সম্মতি দিলে সহ-উপাচার্যকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে এজি তাঁর মতামত প্রত্যাহার করে নেন। এই ঘটনাক্রমের এক সপ্তাহ পরে বুধবার কাকলিদেবীকে তিন বছরের জন্য সহ-উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ করা হল বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বাস্থ্য ভবন। বিজ্ঞপ্তি জারির চব্বিশ ঘণ্টা আগে সহ-উপাচার্যের তিন পাতার চিঠি স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পৌঁছয় বলে খবর। যা নিয়ে আপাতত স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ১ অক্টোবরের ঘটনাক্রমের সূত্র ধরেই সহ-উপাচার্য তাঁর চিঠিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কাকলিদেবীর বক্তব্য, অনৈতিক কাজ করার জন্য উপাচার্য তাঁকে চাপ দিতেন। মৌখিক সেই সব নির্দেশ পালনের অর্থ নিয়োগে দুর্নীতি, স্বজনপোষণকে মান্যতা দেওয়া। তিনি রাজি না হওয়ায় অধস্তন আধিকারিকদের সামনে একমাত্র মহিলা আধিকারিককে হেনস্থা করা হত বলে অভিযোগ। কাকলিদেবীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসিয়ে এমন ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে যে সহ-উপাচার্যের ঘরে ঢুকতে আধিকারিক-কর্মীরা ইতস্তত করেন! কাকলিদেবীর আরও অভিযোগ, নিজের রাজনৈতিক প্রভাব জাহির করে তাঁর নির্দেশ না মানার ফল কী হতে পারে, সে বিষয়েও সহ-উপাচার্যকে হুমকি দিতেন উপাচার্য।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এরকম কোনও অভিযোগ হলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা তদন্ত করে দেখবেন। কোনও ব্যক্তি বিশেষের প্রতি আমার কোনও রাগ নেই। অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতামতের ভিত্তিতে একটা আদেশনামা জারি হয়েছিল। পরে মতামত প্রত্যাহার করে উনি যা বলেছিলেন তার ভিত্তিতে আদেশনামা সংশোধন করা হয়েছে। এরপর কেউ কোনও বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারেন, সেটা তাঁর অধিকারের মধ্যে পড়ে। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’
‘পত্রবোমা’ প্রসঙ্গে সহ-উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলব না। অফিসের কাজে ব্যস্ত। দয়া করে আর ফোন করবেন না।’’ এ কথা বললেও চিঠি পাঠানোর কথা কিন্তু অস্বীকার করেননি সহ-উপাচার্য!