উৎসুক: ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারে নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় ভিড়। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
সভার মাঠ থেকে ডুয়ার্সের চা বাগান বেশি দূরে নয়। চূড়াভাণ্ডার থেকে তাই চা শিল্পের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী বার্তা দেন, সে দিকে নজর ছিল গোটা উত্তরবঙ্গেরই। শুক্রবারের এই সভায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেন, তাঁর সরকার উত্তরবঙ্গের সব চা বাগান খুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, চা শ্রমিকদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থাও করেছে তাঁর সরকার। যে দাবি নস্যাৎ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সহকর্মীরা।
মোদী এ দিন বলেন, ‘‘বন্ধ চা বাগান খুলিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’ তার পরে তিনি দাবি করেন, চা শ্রমিক-সহ সব শ্রমিকের জন্য পেনশন প্রকল্প চালু করেছে তাঁর সরকার। চা শ্রমিকদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘আপনারা চা পাতা তোলেন। আমি চা বানাই।’’ তার পরেই প্রশ্ন করেন, ‘‘দিদি চাওয়ালাদের এত ভয় পান কেন!’’
জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একেবারে ভুল কথা। একটাও ডানকানের বাগান ওঁরা খুলিয়েছেন? রাজ্য বাগান খুলিয়েছে।’’ কটাক্ষের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘উনি কোনও দিন চা বিক্রিই করেননি। চা তৈরি করতেও জানেন না।’’ টি বোর্ডের কর্তাদের বক্তব্য, ডুয়ার্সে বন্ধ হয়ে যাওয়া ডানকান গ্রুপের সাতটি বাগান অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে আইনি জটিলতায় বাগান খোলা সম্ভব হয়নি। রাজ্য শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সাতটি বাগানের দু’টি (ডিমডিমা ও লঙ্কাপাড়া) এখনও বন্ধ। বাকি পাঁচটি বাগান খুলে গিয়েছে। তবে বাগান খোলায় কেন্দ্রীয় সরকার বা টি বোর্ডের কোন ভূমিকা ছিল না বলেই জানিয়েছেন রাজ্যের যুগ্ম শ্রম কমিশনার (উত্তরবঙ্গ) চন্দন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শ্রমিক সংগঠন, মালিকপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে বাগান খোলার ব্যবস্থা করেছি।’’
বাগানের হাজিরাও যেন এ দিনের সভায় কম ছিল। বিজেপি সূত্রেও সে কথা বলা হচ্ছে। সভায় হাজির অনেকেই বলছেন, জন বার্লা বা মনোজ টিগ্গার বক্তৃতার সময়েও বেশি হাততালি পড়েনি। জনকে পরে মোদীর দাবি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র একাধিক চা বাগান খুলিয়েছে বলে সভায় প্রধানমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করেছেন কিনা, তা আমি শুনিনি।’’
শুধু চা-ই নয়, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নপর্বকে কটাক্ষ করতে গিয়ে মোদী কাঠ ও পর্যটনের প্রসঙ্গও টেনেছেন। বলেন, ‘‘তিনটে ‘টি’ দিয়ে উত্তরবঙ্গকে চেনা যায়। কিন্তু টি (চা), টিম্বার (কাঠ) ও টুরিজম (পর্যটন)— তিনটিই অবহেলিত।’’ জবাবে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টই বলছে, পর্যটনে আমরা উন্নতি করছি। আমরা বিদেশি পর্যটক টানার ক্ষেত্রেও ৪ নম্বরে পৌঁছেছি।’’