শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
ব্যালটে সই ছিল না প্রিসাইডিং অফিসারের। তাও সেই ব্যালট গুনতে বিডিও-কে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠল অতিরিক্ত জেলাশাসকের বিরুদ্ধে। তার জেরে ক্ষুব্ধ জনতার হাতে বুধবার সকাল থেকে নন্দীগ্রামের সীতানন্দ কলেজের গণনা কেন্দ্রে ঘেরাও হয়ে থাকলেন সেই অতিরিক্ত জেলাশাসক-সহ অন্য আধিকারিকেরা।
জানা যাচ্ছে, নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭২ নম্বর বুথের ব্যালট বাক্স খোলার পরে দেখা যায়, কোনও ব্যালটেই প্রিসাইডিং অফিসারের সই নেই। ফলে সেগুলি বাতিল ঘোষণা করেন নন্দীগ্রাম ১-এর বিডিও সুমিতা সেনগুপ্ত। মঙ্গলবার প্রায় রাত ১টা নাগাদ গণনা কেন্দ্রে আসেন অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্বেতা আগরওয়াল। অভিযোগ, সর্বসমক্ষে তিনি বিডিওকে চাপ দেন সই ছাড়া ওই সব ব্যালট গোনার জন্য। বিডিও আপত্তি করলে বাদানুবাদ বাধে। ধমক খেয়ে বিডিও কেঁদেও ফেলেন। শ্বেতা বা সমিতা কেউই ফোন ধরেননি। আর পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির দাবি, ‘‘নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে তথ্য আপলোড হচ্ছিল খুব শ্লথ গতিতে। তাই অতিরিক্ত জেলাশাসক গণনা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন।’’
আবার পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলা পরিষদই এ বার বিরোধীশূন্য হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে যেমন কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ৮০-১০০টি ব্যালট বাতিল হয়েছে, কোথাও আরও বেশি। বহু ক্ষেত্রে যে সংখ্যক ব্যালট বাতিল হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আসনে তার চেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলা পরিষদই এ বার বিরোধীশূন্য হয়েছে। পুরুলিয়াতেও সব পঞ্চায়েত সমিতিই তৃণমূলের দখলে। রঘুনাথপুর মহকুমার চারটি পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধী-শূন্য। ৪৯টি পঞ্চায়েতের একটিতেও জেতেনি বিরোধীরা। জেলা পরিষদের বহু আসনেও শাসকদলের প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান অতীত রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
এই সব বিভিন্ন ঘটনাকে সামনে রেখে পঞ্চায়েতে ভোট লুটের পাশাপাশি গণনাতেও বিস্তর ‘কারচুপি’ হয়েছে বলে একযোগে সরব সব বিরোধী দল। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা কটাক্ষ, হেরে গিয়ে বিরোধীরা ভুল বকছে!
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘কী ধরনের লুট করা হয়েছে, ধারণা করতে পারবেন না। এমন বিডিও আছেন, যাঁকে নিয়ে গিয়ে পিস্তল দেখানো হয়েছে। বিজেপির প্রায় ১০ হাজার, বাকিদের ৫ হাজার প্রার্থীর জয় গ্রাম পঞ্চায়েতে কী ভাবে যে সম্ভব হয়েছে, বিশ্বাস করতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কো-অর্ডিনেশন কমিটি গোলমাল করেছে। আসলে এ সব হয়েছে ওঁদের উপদেষ্টা সংস্থার নির্দেশে। অপরাধী বিডিও, এডিএম-দের শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা যতটা পারব, তথ্য জোগাড় করে আদালতে দেব।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও এ দিন বালুরঘাটে বলেছেন, ‘‘ভোট লুটে এগিয়ে বাংলা। বিডিও-রা শাসক দলের ব্লক সভাপতির মতো ভোট লুট করছেন! আইসি ভোট লুট করেছেন।’’
বারুইপুরে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবার পুলিশ এবং তৃণমূল, দু’পক্ষ মিলে গণনা-কেন্দ্রের দখল নিয়েছিল। বিরোধী এজেন্টদের বার করে দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোথাও হামলা হয়েছে। যে হেরেছে, তাকে শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। ব্যালট নষ্ট করা হয়েছে। ব্যালট বাক্সের কোন স্বচ্ছতা নেই। ঠিকমতো গণনা না করে জেলা পরিষদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।’’ বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এখানে কেউ হেরেও জিতেছে, কেউ জিতেও হেরেছে! সন্ত্রাস, পুলিশ-প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, তৃণমূলের হার্মাদ মিলেমিশে নৈরাজ্যের রাজত্ব তৈরি করে দিয়েছিল বাংলায়।’’
রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কেউ বলতে পারবেন, কোনও দলের এজেন্ট বাধা পেয়েছেন? মঙ্গলবার সারা দিনে একটা অভিযোগ শুনিনি। হার দেখে অনেকে কেন্দ্র ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আর বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে এ সব ভুল বকছেন!’’
যদিও মঙ্গলবার সাঁকরাইলের গণনাকেন্দ্রে তৃণমূলের তাণ্ডব ও ব্যালট লুটের জেরে ব্লকের সারেঙ্গা ও মানিকপুর পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের ফল ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছে। হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ওই ব্লকের সারেঙ্গা পঞ্চায়েতের ৬টি এবং মানিকপুর পঞ্চায়েতের ৯টি আসনে আবার ভোট গ্রহণ করা হবে।