বাংলায় নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না বলে আলিমুদ্দিনকে শোধরানোর পথ বাতলাতে আসছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। অথচ সেই বৈঠকের আগে আলিমুদ্দিন সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের সঙ্গে বোঝাপড়া বজায় রেখেই চলার! যাতে এমনিতেই দুর্বল বিরোধী শিবিরে আরও ফাটল ধরানোর সুযোগ শাসক দল না পায়।
বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীকে দেওয়ার জন্য লিখিত ভাবে স্পিকারকে প্রস্তাব দিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু স্পিকার সেই প্রস্তাবে কর্ণপাত না করে কংগ্রেসেরই মানস ভুঁইয়াকে পিএসি-র চেয়ারম্যান ঘোষণা করে দিয়েছেন। সুজনবাবুকে বিধানসভার অন্য দু’টি কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বামেদের প্রাপ্য কমিটিগুলির চেয়ারম্যান পদের জন্য যে সব বিধায়কের নাম পরিষদীয় দলনেতা হিসাবে সুজনবাবু সুপারিশ করেছিলেন, তাঁর মধ্যে নিজের নাম তিনি রাখেননি।
কিন্তু বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মতোই সুজনবাবুর মতও এড়িয়ে গিয়ে তাঁকে কমিটির চেয়ারম্যান করে দেওয়া হয়েছে! এই পরিস্থিতিতেত সুজনবাবু আদৌ ওই দুই কমিটির চেয়ারম্যান থাকবেন কি না, ভাবনা শুরু হয়েছে সিপিএমে। আলিমুদ্দিনে মঙ্গলবার রাতে
রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এই ব্যাপারে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে বাম পরিষদীয় দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জোট-পথ ছেড়ে বেরোনোর ফরমান হাতে প্রকাশ কারাটদের কলকাতা আগমনের ঠিক আগে যে সিদ্ধান্ত যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি রায় দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে দলের লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়নি আলিমুদ্দিন। সেই ভুল সংশোধনের লক্ষ্যেই রবিবারের বৈঠক। কিন্তু বঙ্গ সিপিএম যে এ রাজ্যের জনতার কাছে রাতারাতি উল্টো বার্তা দিতে চায় না, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট বিধানসভা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তেই। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বিধানসভায় যে ঘটনা সোমবার ঘটেছে, তার প্রতিবাদে দুই কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। বা কমিটি থেকে সদস্য প্রত্যাহার করে নেওয়া যেতে পারে। কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছে আমাদের পরিষদীয় দলকে।’’ দলের রাজ্য নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রীয় কমিটির মতামত একান্তই নির্বাচনী কৌশল সংক্রান্ত। বিধানসভার ভিতরে বা বাইরে প্রয়োজন বিশেষে আন্দোলনে তার প্রভাব পড়ার কথা নয়।
দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, কারাট-সহ পলিটব্যুরোর এক ঝাঁক সদস্যের হাজির থাকার কথা রবিবারের বৈঠকে। সে দিন শুধু তাঁদের কথাই একতরফা শোনার জন্য তৈরি নয় আলিমুদ্দিন। রাজ্য কমিটির কিছু সদস্যকে বেছে রাখা হচ্ছে পলিটব্যুরোর সামনে কিছু প্রশ্ন তোলার জন্য। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এটা সাধারণ সভা নয় যে, শুধু নেতৃত্বই বলবেন! কমিটির সদস্যদেরও বলার অধিকার থাকবে।’’
তবে কারাটদের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠকের পর দিনই মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্রের এফডিআই নীতি-সহ কিছু বিষয়ের প্রতিবাদে কলকাতায় মিছিল আছে বামফ্রন্ট ও তার বাইরের মোট ১৭টি দলের। সেই তালিকায় কংগ্রেস নেই। কিন্তু কোথাও হামলার ঘটনা ঘটলে কংগ্রেসের সঙ্গে দলের বিধায়ক-সাংসদদের পাঠিয়েই যৌথ প্রতিবাদের ছবি জনমানসে ধরে রাখার চেষ্টা করবে বঙ্গ সিপিএম।