পরিকাঠামোর ঘাটতিতেই দুর্দশা শেষ হচ্ছে না। অনেক পড়ুয়ার অভিযোগ, ২০০৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণের জন্য এই চোদ্দো বছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তরফে কোনও পরিদর্শনই (ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল বা নাকের পরিদর্শন) হয়নি। আলিয়ার উপাচার্য মহম্মদ আলি বলেন, “নাক ভিজ়িটের প্রস্তুতি চলছে।”
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ টাউন ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শুধু উপাচার্য-নিগ্রহের সাম্প্রতিক ঘটনাতেই যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে দাগ লেগেছে, তা নয় বলেই জানাচ্ছেন পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, বহু কাল ধরেই অনেক কিছু ভেঙে পড়ছে আলিয়ায়। কোথাও ভেঙে পড়েছে কাচের জানলা তো কোথাও ‘ফলস সিলিং’ বা নকল ছাদ। সিমেন্টের চাঁই খসে পড়ছে এখানে-ওখানে। পরিকাঠামোগত নানান অসুবিধায় আলিয়া এতটাই জর্জরিত যে, পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে নানা ভাবে। সব কিছু ভেঙে পড়ছে কেন? রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের দিকে তর্জনী তুলছেন পড়ুয়াদের বড় অংশ। তাঁদের দাবি, এই শ্রীহীন অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন চাই। কিন্তু সমস্যার সুরাহার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে বার বার চিঠি লিখেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি বলে পড়ুয়াদের অভিযোগ।
আলিয়ার নিউ টাউন ক্যাম্পাসে ঘুরলে নীল-সাদা বিশাল ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন চোখে পড়বে। অসংখ্য জায়গায় সিমেন্টের চাঁই খসে গিয়েছে। বড় বড় জানলার কাচ ভাঙা। কোথাও আবার জানলা এতটাই ভাঙা যে, বাইরে থেকে সেখান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ভিতরে অনায়াসে ঢুকে পড়া যায়।
ওই সব ভাঙা অংশ ঘূর্ণিঝড় আমপানের ক্ষত বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক দল ছাত্র। তাঁদের অভিযোগ, আমপানের ধাক্কায় রাজ্যের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেগুলো কমবেশি সারাই হয়েছে। কিন্তু আলিয়ায় আমপানের ক্ষত একই রকম রয়ে গিয়েছে। শুধু ভবনের বাইরের দিকে নয়, কিছু শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গিয়েছে, উপরের ফলস সিলিং পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে।
আলিয়ার সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এক কালে চালু হয়ে থাকলেও এখন সেটা অচল। এমনকি পাখা পর্যন্তও নেই। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন, সক্রিয় বাতানুকূল ব্যবস্থা, পাখা ছাড়া এই গুমোট গরমে লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করা কি সম্ভব? নিউ টাউন ক্যাম্পাসে ঘুরলে পানীয় জলের অভাব, শৌচাগারের অব্যবস্থার অভিযোগও কানে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব লিফট চলে না বলে অভিযোগ। মিরাজুল ইসলাম নামে পিএইচ ডি-র এক ছাত্র বলেন, “আলিয়ার ক্যাম্পাস তিনটি— তালতলা, পার্ক সার্কাস এবং নিউ টাউন। তিনটি ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন জেলার প্রচুর পড়ুয়া আছেন। ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু সেই তুলনায় হস্টেল বা ছাত্রাবাস নেই। যে-সব হস্টেল আছে, সেগুলির পরিকাঠামো নিয়েও সমস্যা প্রচুর।”
আলিয়ার তিনটি ক্যাম্পাস নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছু পড়ুয়ার অভিযোগ, তাঁদের ল্যাবরেটরিতে যত যন্ত্রপাতি রয়েছে, তার অনেক কিছুই নতুন অবস্থায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কারণ, ওই সব যন্ত্র যে-সংস্থা থেকে আনা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের টাকা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আর-পাঁচটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হলেও তারা রাজ্যের শিক্ষা দফতর নয়, মাদ্রাসা শিক্ষা ও সংখালঘু উন্নয়ন দফতরের অধীনে। আলিয়ার পরিকাঠামোর উন্নতির বিষয়টিও সংখ্যালঘু দফতরই দেখে। আলিয়ার উপাচার্য বলেন, “পরিকাঠামো একটু একটু করে ঠিক করা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ নেই। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের কাছে তহবিল চাওয়া হয়েছে।”
পরিকাঠামোর ঘাটতিতেই দুর্দশা শেষ হচ্ছে না। অনেক পড়ুয়ার অভিযোগ, ২০০৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণের জন্য এই চোদ্দো বছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তরফে কোনও পরিদর্শনই (ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল বা নাকের পরিদর্শন) হয়নি। আলিয়ার উপাচার্য মহম্মদ আলি বলেন, “নাক ভিজ়িটের প্রস্তুতি চলছে।”