চলছে হাঙ্গামা। বুধবার কলকাতায় দলীয় অফিসের সামনে মারমুখী বিজেপি কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বিশৃঙ্খলা দমনে কড়া বার্তা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার পরেও অব্যাহত বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবারের পর বুধবারও বিজেপি-র রাজ্য দফতরের সামনে লাঠিপেটা করে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর প্রতিবাদ থামাল দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী! আর বিক্ষুব্ধদের প্রতিবাদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তৃণমূলের ‘চক্রান্তে’র তত্ত্ব এনে ফেললেন রাহুলবাবু। পরিস্থিতি এমনই গম্ভীর যে, এ দিন বিক্ষুব্ধদের হাঙ্গামা ঠেকাতে দলের রাজ্য দফতরের এক তলায় সাংবাদিক সম্মেলনের ঘরে কেষ্টপুর থেকে রীতিমতো হল্লা বাহিনী এনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল!
বিজেপি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পূর্ব) জেলার প্রাক্তন সভাপতি জয়ন্ত বসু অনুগামীদের নিয়ে এ দিন দুপুরে কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল করে দলের রাজ্য দফতরের সামনে আসেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের দুর্নীতি এবং অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির সামনে অনশনের কর্মসূচি ছিল তাঁদের। কিন্তু শুরুর আগে ক্ষমতাসীন শিবিরের নেতা-কর্মীরা লাঠিপেটা করে হঠিয়ে দেন। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বলেন, “আমাদের কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরা দলের নেতা অশোক সরকারের ছেলে অভীক সরকারকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তখন আমাদের কর্মীরা তাঁদের হঠিয়ে দেন!” অসীমবাবুর দাবি, জয়ন্তবাবুকে দল তিন মাস আগে বহিষ্কার করেছে। আর তাঁর সঙ্গে যে তিন জন স্থানীয় কর্মী এসেছিলেন, তাঁদের ক্ষোভ জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে। তাঁদের জেলা সভাপতির সঙ্গেই কথা বলতে বলা হয়েছে। অসীমবাবুর আরও দাবি, ওই তিন জন ছাড়া আর যাঁরা জয়ন্তবাবুর সঙ্গে ছিলেন, তাঁরা বিজেপি-র লোকই নন। জয়ন্তবাবুর পাল্টা দাবি, তাঁকে গত ২১ মার্চ সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রাহুলবাবুও এ দিন বলেন, মঙ্গলবার ১৬-১৭ জন দলের রাজ্য দফতরে উশৃঙ্খল বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তাঁদের মধ্যে চার জন বাদে বাকিরা তৃণমূলের লোক। রাহুলবাবুর দাবি, বিজেপিকে বিব্রত করতে তৃণমূলই উচ্ছৃঙ্খল বাহিনী পাঠিয়ে রাজ্য ও বিভিন্ন জেলা দফতরে গোলমাল পাকাচ্ছে। এই অভিযোগে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব। শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি আগে ঠিক করুক কোনটা বলবে! অমিত শাহ, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ থেকে শুরু করে রাহুল সিংহ ২৪ ঘণ্টা আগে আত্মতুষ্টির ঢঙে বলেছিলেন, তাঁদের দল বড় হচ্ছে বলে কর্মীদের প্রত্যাশা বাড়ছে। আজ বলছেন, গোলমালের পিছনে তৃণমূল আছে!” পার্থবাবুদের পাল্টা অভিযোগ, “তৃণমূল কর্মীদের ঠ্যাঙানোর জন্য বিজেপি নেতারা যাদের হাতে ডান্ডা তুলে দিয়েছিলেন, আজ তারাই ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে পাল্টা পেটাচ্ছে।” তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “এ রাজ্যে যে দলের দুটো সাংসদ আর এক জন মাত্র বিধায়ক, তারা এখনই এত মারামারি করছে! এ দল রাজ্য চালাবে কী করে?”
এমতাবস্থায় সিপিএম দেখানোর চেষ্টা করছে, বিজেপি আর তৃণমূল একই মুদ্রার দুই পিঠ! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী বলতে গিয়েছিলেন আমাকে রক্ষা করুন! এখন মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর দলকে রক্ষা করতে দফতর পাহারা দিচ্ছে! বিজেপি নিজেদের কর্মীদের নিজেরাই লাঠিপেটা করছে। এই দল তৃণমূলের বিকল্প হবে?” সূর্যবাবুর কথায়, “আমরা আগেও বলেছি, এখন আবার বলছি, তৃণমূলের এক এবং একমাত্র বিকল্প বামই!”
প্রশ্ন উঠেছে, পুরভোটে বিজেপি-র প্রার্থী হওয়া নিয়ে হাঙ্গামা কেন? দলের ঘরে-বাইরে আলোচনা হচ্ছে, অর্থই এই অনর্থের মূল! লোকসভা ভোটের সময় থেকে বিজেপি-র হাওয়া তৈরি হওয়ায় অনেকে ভাবছেন, বিজেপি-র টিকিট পেলে এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। কাউন্সিলরের লড়াইয়ে নেমে মুখ চেনাতে পারলে ক্ষমতা এবং অর্থের মধুভাণ্ড হাতের মুঠোয় আসবে। তাই যেন তেন প্রকারে টিকিট আদায় করার মরিয়া চেষ্টা। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও এ দিন কটাক্ষ করেছেন, “বিজেপি-র দফতরের সামনে লাঠি নিয়ে মারামারি হচ্ছে টিকিটের জন্য। আসলে বিজেপি এখন ‘কালেকশনের’ জায়গা! কারণ, তারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে।”