ঘটনার দিনে
আর নয়। অন্য কোনও স্কুলে চলে যেতে চান ওঁরা দু’জনেই। গত বৃহস্পতিবার থেকেই সরকারি ভাবে দাড়িভিট হাইস্কুলের শিক্ষক ওঁরা। কিন্তু ওই দিন তুলকালাম
কাণ্ডের পর ওই স্কুলে আর পড়ানোর ইচ্ছে নেই উর্দু শিক্ষক সানাউল্লা রহমান এবং সংস্কৃতের তোরাঙ্গ মল্লিকের।
সে দিন সকালে তাঁরা দু’জনেই চাকরিতে যোগ দিতে ওই স্কুলে গিয়েছিলেন। সরকারি নিয়ম মেনে যোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের যোগ দেওয়ার বিরোধিতা করে স্কুলে ও এলাকায় তুমুল বিক্ষোভ তৈরি হয়। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে চাপা আতঙ্ক ধরা পড়েছে দু’জনেরই গলায়। উর্দু শিক্ষক সানাউল্লা শনিবার ফোনে বললেন, ‘‘এই স্কুলটা সম্পর্কে আগে থেকে আমার কোনও ধারণাই ছিল না। কিন্তু চাকরিতে যোগ দিতে এসে দেখি, বাচ্চা ছেলেমেয়েরা আমাদের লাঠি দেখাচ্ছে। হাত দিয়ে থাপ্পড় দেখাচ্ছে। খুব খারাপ লেগেছিল। ভাবতেই পারিনি এমনটা।’’ একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা পিছন থেকে বাচ্চাদের ভুলপথে চালিত করেছে, বিভ্রান্তিকর ধুয়ো তুলে অনৈক্যের পরিবেশ তৈরি করছে তাদের গ্রেফতার করে জেলে ভরা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘ছোটরা যে ভাবে পুলিশকে মারছিল ভাবা যায় না। আমরা তো স্কুলের ভিতরে ছিলাম।
নিজেদের জঙ্গি মনে হচ্ছিল, যেন একটা বাড়িতে আমাদের সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছে! স্কুল জুড়ে এমনই একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’’ তবে তাঁর বক্তব্য, গন্ডগোলের মধ্যে ওই দিন কে বা কারা কাদের নির্দেশে গুলি চালিয়েছিল তা তিনি জানেন না। তবে বিক্ষোভ দানা বাঁধার সঙ্গে সঙ্গে সেদিন পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় নেতারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করলে এতবড় ঘটনা এড়ানো যেত। কলকাতার বাসিন্দা সানাউল্লা চান, উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে শিক্ষা দফতর তাঁকে অন্য কোনও স্কুলে বদলি করুক।
অন্য দিকে, ঘটনার দু’দিন পরেও আতঙ্ক কাটেনি সংস্কৃত শিক্ষক তোরাঙ্গ মল্লিকের। ওই স্কুলে যোগ তো দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন তিনি। এ দিন তাঁর কথায়, ‘‘যে সব ছাত্ররা আমাদের চাইছে না, সেই স্কুলে আমরা কী ভাবে কাজ করব?’’ কোচবিহারের বাসিন্দা তোরাঙ্গের বক্তব্য, ওই এলাকার পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাঁদের পক্ষে অনুকূল নয়। তাই তাঁদের কারণে ওখানে কোনও গন্ডগোল হোক, সেটাও তিনি চান না। তাই অন্য কোনও স্কুলে পাঠানোর জন্য তিনি শিক্ষা দফতরে আবেদনের কথা ভাবছেন।