বিপদ: কানে মোবাইল, হাতেও তাই। এ ভাবেই চলছে রেল লাইন পারাপার। সোমবার, বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
কিছু ক্ষণ অন্তরই মাইকে ঘোষণা চলছে। তা সত্ত্বেও হেলদোল নেই। ট্রেন আসছে, যাচ্ছে। তার মধ্যেই কানে মোবাইল কিংবা ইয়ার ফোন লাগিয়ে কথা বলতে বলতে রেল লাইন পারাপার করছেন যাত্রীদের একাংশ।
চলতি মাসেই শিয়ালদহ শাখার দুর্গানগর স্টেশনে মোবাইল কানে রেল লাইনের ধারে কথা বলার সময়ে এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় আহত হন তিন জন। মৃত্যুও হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রেন অবরোধ-সহ তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। তার পরেই বারাসত ও বামনগাছি স্টেশনের মাঝামাঝি মোবাইল কানে রেল লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় এক কলেজ ছাত্রীর। কিন্তু এত কিছুর পরেও হুঁশ ফিরছে না কিছু মানুষের। মোবাইল কানে পারাপার চলছেই। রেলের বক্তব্য, এক দিকে প্রচার সত্ত্বেও মোবাইল কানে দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামা চলছেই। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্য দিকে, দু’টি স্টেশনের মাঝে যেখান দিয়ে রেল লাইন গিয়েছে সে সব ফাঁকা জায়গাতেও এমন ঘটনা ঘটছে।
মোবাইল বা ইয়ার ফোন কানে পারাপারের জন্য প্রতি দিন গড়ে ৬টি ট্রেনে ধাক্কা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল। ওই শাখার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘প্রতিটি স্টেশনে ঘন ঘন প্রচার, নানা ভাবে সতর্ক বার্তা, ধরপাকড় করেও মোবাইল কানে লাইন পারাপারের প্রবণতা কমানো যাচ্ছে না।’’ রেল সূত্রে খবর, এই সব পদক্ষেপ করার পরে হাওড়া শাখায় কিছুটা কমলেও শিয়ালদহ শাখায় দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
রবিবাবু বলেন, ‘‘এটা আসলে সামাজিক সমস্যা। সামান্য অসতর্কতার জন্য জীবন চলে যাচ্ছে সে হুঁশও থাকছে না।’’
রেলের পরিসংখ্যান বলছে, শিয়ালদহের মতো যে সব স্টেশন পাঁচিলে ঘেরা, বাইরে থেকে ঢোকার উপায় নেই, সে সব স্টেশনে এমন ঘটনা হচ্ছে কম। কিন্তু বেশির ভাগ স্টেশনেই এমন ব্যবস্থা নেই। ফাঁকা জায়গা বা রাস্তা থেকে সরাসরি প্ল্যাটর্ফমে উঠে পড়া যায় এমন স্টেশনেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। যেমন দেখা গেল, দমদম জংশন স্টেশনে— ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে রেল লাইনের উপর দিয়ে কানে মোবাইল নিয়ে যাতায়াত চলছে। বারাসত স্টেশনে এক ঘণ্টার মধ্যে দেখা গেল, প্রায় ৩০ জন কানে মোবাইল-ইয়ার ফোনে কথা বলতে বলতে প্ল্যাটফর্মে উঠছেন। কেন এমন করছেন? প্রশ্ন শুনে এক কলেজ ছাত্র কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে কিঞ্চিত অবাক
হয়ে তাকিয়ে নির্বিকার ভাবে চলে গেলেন। দেখা গেল, মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি মেসেজ বা হোয়াটস্যাপে টাইপ করতে করতে আরও বিপজ্জনক ভাবে লাইন পেরোচ্ছেন অনেকে।
শুধু প্রচারে এই প্রবণতা রুখতে না পেরে জেল-জরিমানার শাস্তিও চালু করেছে রেল। মোবাইলে কথা বলতে বলতে লাইন পারাপার করলে ২ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের নির্দেশও রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমছে না এই প্রবণতা। তবে এ জন্য রেল পুলিশের নজরদারির অভাবকেও দায়ী করেছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের একাংশের দাবি, মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করলেই সবচেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া যাবে। এক সময় যেমন প্রচার, জরিমানা করেও মোবাইল কানে মোটরবাইক বা গাড়ি চালানোর প্রবণতা বন্ধ করতে পারছিল না উত্তর ২৪ পরগনা ট্রাফিক পুলিশ। এর পরে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা শুরু হয়। আদালত থেকে ২-৪ মাস পরে বাজেয়াপ্ত মোবাইল ছাড়ানোর ঝক্কির ভয়ে সেই অপরাধ এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে।