কবি সুবোধ সরকারের অভিযোগ, সুবিনয় হেমব্রমের কবিতার ‘অপব্যাখ্যা’ করেছে সংবাদমাধ্যম।
কবিতা লিখেছিলেন অপরিচিত এক জন। সেই কবিতা ফেসবুকে ‘শেয়ার’ করেছিলেন প্রতিষ্ঠিত এক কবি। তাঁদের পোস্ট নিয়ে চর্চা শুরু হতে দু’জনেই এ বার ব্যাখ্যা দিলেন।
কবি সুবোধ সরকারের অভিযোগ, সুবিনয় হেমব্রমের কবিতার ‘অপব্যাখ্যা’ করেছে সংবাদমাধ্যম। ফেসবুকেই রবিবার সুবোধবাবু লিখেছেন, ‘‘হেমব্রমের কবিতায় যে ‘আপনি’, সেই আপনি আসলে আমি। হ্যাঁ আমি। ভাই সুবিনয় হেমব্রম, গত দু’শ বছরে আমি কী করতে পেরেছি তোমার জন্য?’’ শহরের মানুষ রোমান্টিকতার টানে জঙ্গলে শুধু বেড়াতে গিয়েছেন বলে মন্তব্য করে সুবোধবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘তবু তো গত আট বছরে এক জন নারী তোমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নিজে মুড়ি-চা খেয়ে, শাড়ি দিয়ে কপালের ঘাম মুছে তোমাদের ঘরে ঘরে চাল পৌঁছে দিয়েছেন। সেটা তো ৫০ বছরে কেউ করেনি।’’ নাম না করলেও কবির ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর উন্নয়ন-কাণ্ডের দিকে।
স্বয়ং সুবিনয় অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকে এতটা উদার ছাড়পত্র দিতে রাজি নন। তাঁর মতে, আদিবাসী সমাজকে নিয়ে পরিচতি সত্তার যে রাজনীতি চলে আসছে, তার দায় মমতাও এড়াতে পারেন না। ফেসবুকে পোস্ট করা তাঁর কবিতার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুবিনয় বলছেন, ‘‘শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, সমস্ত রাজনৈতিক দল এত দিন ধরে এটাই করেছে। আর সেটাই এখন বুমেরাং হচ্ছে!’’
রাজনৈতিক শিবিরের কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, সব রাজনৈতিক দলই পরিচিতি সত্তার রাজনীতি করে থাকলে জঙ্গলমহল বা মতুয়া এলাকায় সব চেয়ে বেশি ভোট ‘নোটা’য় পড়ত। কিন্তু সেখানে একটা নির্দিষ্ট দল কেন ফায়দা পেল? তাঁদের প্রশ্ন, পরিচিতি সত্তার নাম করে ‘পাইয়ে দেওয়া’র রাজনীতিই কি বিরূপ ফল দিল?
শাসক দলের তরফে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সাঁওতালি ভাষা বা অলচিকি হরফে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা মানে একটা জনগোষ্ঠীর আবেগ ও দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়া। রাজবংশীদের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। জাতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের বিভেদ বাধানোর চেষ্টা তো মুখ্যমন্ত্রী করেননি। সেটা এখন অন্য কেউ করছে।’’ আবার সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘জঙ্গলমহল কেমন হাসছে, মুখ্যমন্ত্রী ও পার্থবাবুরা এখন বুঝতে পারছেন!’’
কবিতায় যাঁকে উদ্দেশ করা হয়েছে, তিনি কে? সুবিনয়ের বক্তব্য, ‘‘এক জন কেউ নন। আবার কাল্পনিক কেউও নয়। একটা প্রবণতার কথাই আমি বলতে চেয়েছি।’’ আদতে পুরুলিয়ার বাসিন্দা এই যুবক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে চলে আসেন হুগলির কাশীপুরে। এখন একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বলছিলেন, তাঁর বাড়িতে এক দিন স্থানীয় তৃণমূলের নেতা লোকশিল্পী ভাতার আবেদনপত্র নিয়ে হাজির। সুবিনয়ের কথায়, ‘‘উনি আমার উপকার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কী দরকার, সেটা না দেখে উপকার করতে গেলে না হবে আমার মঙ্গল না আমার শিল্প-সংস্কৃতির।’’ বছর আঠাশের এই যুবক মনে করেন, রাজনীতিতে কোনও গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে তার ধর্ম দিয়ে, ভাষা দিয়ে বা সংস্কৃতি দিয়ে চিহ্নিত করার প্রবণতাটাই ঝুঁকির।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।