মেয়ের বিয়ে দিতে হিমসিম খায় আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবার। তাই তাদের পাশে দাঁড়াবে রাজ্য সরকার।
কয়েক বছর আগে তামিলনাড়ু মেয়ের বিয়েতে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এ বার পশ্চিমবঙ্গও মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে শুরু করতে চলেছে রূপশ্রী প্রকল্প।
বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ করার সময়ে বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকার কম হলে মেয়ের বিয়ের সময়ে নগদ ২৫ হাজার টাকা পাবে পরিবার। একটাই শর্ত, মেয়ের বয়স ১৮ বা তার বেশি হতে হবে। এই প্রকল্পের জন্য ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বার্ষিক প্রায় ৬ লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে।
এ দিন বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, অনেক পরিবারের আর্থিক সম্বল না থাকায় মেয়ের বিয়ে দিতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘গরিব বাবা-মায়ের চিন্তা করার দরকার নেই। তাঁদের মেয়েদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেব। ১৮ বছর বয়স হতে হবে।’’ তৃপ্ত গলায় তিনি যোগ করেন, ‘‘কন্যাশ্রী আমাদের গর্ব, রূপশ্রী আর একটা গর্ব হবে। জন্ম-মৃত্যুর জন্য প্রকল্প ছিল, এ বার বিয়েটাও জুড়ে দিলাম।’’
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সৌজন্যে এ রাজ্যে কমেছে স্কুলছুটের সংখ্যা। কন্যাশ্রী যোদ্ধারা জেলায় জেলায় নাবালিকা বিয়ে রোখার কাজেও খুবই সক্রিয়। এ বার রূপশ্রী নাবালিকা বিয়েতে আরও লাগাম পরাবে বলে মনে করছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়রা। তাঁদের বক্তব্য, টাকার আশ্বাস পরিবারগুলিকে মেয়ের বয়স ১৮ হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে উৎসাহ দেবে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো কিংবা ইউনিসেফ-এর সমীক্ষায় বারবার উঠে এসেছে নাবালিকা বিয়ে এবং নারী পাচারের মতো অপরাধে এ রাজ্য প্রথম সারিতে। অনেক সময়েই নারী পাচারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে নাবালিকা বিয়ে। তাই সেটা রুখতে পারলে পাচারের ঘটনা কমবে বলেও আশা।
নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ অবশ্য কিছু আশঙ্কার জায়গাও দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের জন্য টাকা দেওয়ার প্রকল্পের জেরে নারীঘটিত অপরাধ এবং দুর্নীতি বাড়বে না তো! দালালেরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কি না, তা-ও দেখার!’’
রূপশ্রীকে স্বাগত জানিয়েও কিছু প্রশ্ন বিরোধীরা তুলেছেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, কর্নাটকের ভাগ্যলক্ষ্মী প্রকল্পে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। রূপশ্রী সে দিক থেকে নতুন কিছু নয়। আর সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, রূপশ্রী তো কন্যাশ্রীরই পরের ধাপ! কন্যাশ্রীতে টাকার পরিমাণ অন্তত দু’হাজার হলে ভাল হত। বাম আমলে অনুরূপ প্রকল্পে ১২০০ টাকা দেওয়া হত বলে তাঁর দাবি। মমতার সরকার এখন কন্যাশ্রীর টাকা ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০০ করছে।