উদ্বিগ্ন: বাসের অপেক্ষায় পর্যটকেরা। ভিড় সামলাচ্ছে পুলিশ। দার্জিলিঙের চকবাজারে। ছবি: সন্দীপ পাল।
পাহাড়প্রমাণ চাপের মুখে পড়েও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কিন্তু কত দিন তা চালানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পাহাড়ে মিরিক পঞ্চায়েত অফিস-সহ কিছু সরকারি দফতর, লোধাম্মা বিদ্যুৎকেন্দ্র, এমনকী, স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে মোর্চা বিরোধী হাওয়াও দেখা গিয়েছে শুক্রবারই। মিরিকে তৃণমূল মিছিল করেছে। মোর্চা যে পাল্টা মিছিলের আয়োজন করেছিল, পুলিশ-আধা সামরিক বাহিনী তা শহরে ঢুকতেই দেয়নি। মোর্চার মিটিং-মিছিল তেমন জমছেও না। মোর্চার সদর দফতর ও সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা সেনা-আধা সেনার দখলে থাকায়, সে দিকেও দিনভর পা দিতে পারেননি কেউ। গুরুঙ্গও উধাও সারা দিন।
সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজ্যের কড়া অবস্থান। মোর্চা তাকিয়ে ছিল দিল্লির দিকে। কিন্তু দিল্লি বা রাজভবন কোনও জায়গা থেকেই সরকারি ভাবে সদর্থক সাড়া মেলেনি। বরং বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিনই জানিয়েছেন, মোর্চা কেবল তাঁদের ‘বন্ধু দল’ মাত্র। পাহাড়ে অশান্তির দায় তাঁরা নেবেন না। ত্রিপাক্ষিক আলোচনা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের রিপোর্ট পেয়ে তবে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।’’
এই সাঁড়াশি চাপের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট বন্ধ অবৈধ বলে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, চার বছর আগে মোর্চার ডাকা বন্ধে ৬৯ কোটি টাকারও বেশি সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল বলে রাজ্যের দাবি। ওই টাকা কেন রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ বাবদ মোর্চা দেবে না, তা হলফনামা পেশ করে জানাতে শুক্রবার নির্দেশ দিল হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে বিচারপতি মাত্রের নির্দেশ, বন্ধে পাহাড়ে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে, যানবাহন সচল রাখতে, প্রশাসনিক কাজকর্ম চালু রাখতে চার বছর আগে হাইকোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা কার্যকর করা হয়েছে কি না, তা আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশ করে জানাতে।
এই পরিস্থিতিতে নানা দিক থেকে চাপ ক্রমশ পাহাড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়ানোয়, তা কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, সেই প্রশ্নে এখন মোর্চার নেতা-কর্মীদের অনেকেই খানিকটা দিশেহারা। দলের একাধিক প্রবীণ নেতা জানান, আপাতত রাজ্য একবার ডাকলেই বন্ধ থেকে সরার কথা ভাবার সুযোগ পাবে মোর্চা। মোর্চার পঞ্চায়েত স্তরের অনেক নেতা একান্তে বলছেন, মনে রাখতে হবে, ’৮৬ সাল কিংবা ২০০৭ (যে সময়ে গুরুঙ্গের উত্থান) সালের শাসক দলের মানসিকতার সঙ্গে এখনকার মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবের বিস্তর ফারাক।
মোর্চা এখন খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরছে জিএনএলএফ, হরকাবাহাদুর ছেত্রীর জন আন্দোলন পার্টির বিবৃতিকে। দু’টি দলই আলাদা রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করে গুরুঙ্গের বাড়িতে তল্লাশির নিন্দা করেছে। কিন্তু, আন্দোলনের নামে ঘরদোর জ্বালানোও ঠিক নয় বলেও সতর্ক করেছে তারা।
সহ-প্রতিবেদন: শমীক ঘোষ
• বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিজয়বাড়ির রাস্তায় সরকারি বাসে আগুন
• রাতে পুড়ল গয়াবাড়ির টয়ট্রেন স্টেশন
• গভীর রাতে লোধামার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগুন
• রিম্বিকে পোড়ানো হল বন দফতরের কর্মী আবাসন
• তারখোলায় জল বিদ্যুৎ দফতরে আগুন
• শুক্রবার সকালে আগুন মিরিকের জাপিলো বস্তি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে
• দুপুরে কালিম্পঙের বমবস্তি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে আগুন