Women Trafficking

মেলেনি সাহায্য, নারী পাচারের শঙ্কা বাড়াচ্ছে আমপান

উত্তর বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় আয়লা-পরবর্তী সময়ে একাধিক মেয়েকে কাজ দেওয়া বা বিয়ের নামে পাচার করেছিল পাচারকারীরা।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৬:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

আয়লার পরে দিনের পর দিন ত্রাণ পৌঁছয়নি বহু প্রত্যন্ত এলাকায়। ফলে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন সেখানকার বহু মেয়ে। সামান্য টাকার জন্য অনেক মেয়েকে পাচারকারীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁদের স্বামী বা পরিজনেরাই। ২০০৯ সালের আয়লার পরে কেটেছে ১১টা বছর। আমপানের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে যাওয়া গ্রামগুলির মেয়েদের চিন্তাই তাই কুরে কুরে খাচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে পাচার রোধে কাজ করা শাকিলা খাতুন বা মনিকা সরকারদের এখন একটাই ভাবনা— মেয়েরা ঠিক আছেন তো?

Advertisement

আমপানের দাপটে এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বহু প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও পৌঁছনোই যায়নি। তাই সেই সব এলাকার দুর্গতদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁদের সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মনিকা-শাকিলারা। ওই মেয়েদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েতের কাছে তাঁর নাম লিখিয়ে রাখা হচ্ছে, যাতে সাহায্য সহজে মিলতে পারে। আর বারংবার চেষ্টার পরেও কোনও মেয়ের ফোন না লাগলেই দেখা দিচ্ছে ভয়।

কারণ, উত্তর বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় আয়লা-পরবর্তী সময়ে একাধিক মেয়েকে কাজ দেওয়া বা বিয়ের নামে পাচার করেছিল পাচারকারীরা। আমপান পরবর্তী সময়ে সেই পাচারের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পাচার রোধে একযোগে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। কারণ, এখন লকডাউনের জেরে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারগুলি। সেই সঙ্গে এসেছে আমপান। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে জলের নীচে চলে গিয়েছে গ্রামের বহু ঘরবাড়ি, জমিজমা। তাই সেই সব এলাকার মেয়েদের খবর না-পাওয়া পর্যন্ত চিন্তা থাকছেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু নার্সের, বদলি হলেন একাধিক সিএমওএইচ

পাচার রোধে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে শাকিলা জানাচ্ছেন, কালীতলা, রূপমারি, পাতলিখানপুরের মতো হাসনাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামগুলি এখনও রয়েছে জলের তলায়। সরকারি-বেসরকারি কোনও সাহায্যই পৌঁছয়নি সেখানে। ফলে ওই সব জায়গার যে সব পরিবারের মেয়েদের পাচার হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তায় রেখেছে তাঁকে। শাকিলা জানাচ্ছেন, আয়লার মাসখানেক পরে ওই সমস্ত গ্রামে যখন সাহায্য পৌঁছয়নি, তখন সেখানকার মেয়েরা কোনও না কোনও ভাবে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাউকে কাউকে উদ্ধার করা গেলেও অনেকেই আজও ফিরে আসেননি। তাই আমপানের পরে সাহায্য না পেয়ে ওই সব জায়গার মেয়েরা যে ফের পাচার হয়ে যাবেন না, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাঁর কথায়, “এই গ্রামগুলির মেয়েদেরই পাচারকারীরা টার্গেট করতে পারে।”

আরও পড়ুন: অতিমারিতে থমকে যাওয়া শাহিন বাগ ফের জাগছে

তবে আমপান আসার আগেই, লকডাউন চলাকালীন উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে বছর পনেরোর একটি কিশোরীকে বিয়ের নামে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে স্বরূপনগরের ইটভাটায় লুকিয়ে রেখেছিল এক পাচারকারী। সেই পাচারকারীর স্ত্রীর সাহায্যে মে মাসের প্রথম দিকে কিশোরীটিকে উদ্ধার করে চাইল্ড লাইন ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই সংস্থার তরফে মনিকা জানাচ্ছেন, মেয়েটিকে নিয়ে পুণে যাওয়ার ছক কষেছিল পাচারকারী। কিন্তু লকডাউনে ট্রেন-বাস কিছুই না চলায় সেই ছক সফল হয়নি। তবে আমপানের পরে ক্রমশ লকডাউন-বিধি শিথিল হচ্ছে, আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিবহণও। ফলে পাচারকারীরা এ বার প্রবল ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। মনিকা ও তাঁর সঙ্গীরা তাই মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে পৌঁছনোর। উত্তরের মতো দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী, গোসাবা, ক্যানিং-সহ একাধিক জায়গাতেও নারী পাচার নিয়ে একই ভয় পাচ্ছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement