‘ভাটি বন্ধ, চকলেট তৈরি শুরু করলাম’

এলাকার এক পরিচিতের সঙ্গে মোটরবাইকে পৌঁছনো গিয়েছিল ওই চকলেট কারখানায়। নিজেকে বাজির ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতে মুখ খুললেন মালিক।  বললেন, ‘‘এক হাজার চকলেট। হাজার টাকা পড়বে। দু’হাজার নিলে ১৮০০ টাকা। ঠিকানা দিলে চকলেট পৌঁছে দিয়ে আসবে আমার ছেলেরা।’’ 

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৭
Share:

দক্ষিণ ২৪ পরগনার আসুতি ১ পঞ্চায়েত এলাকার মহেশতলা থানার কালিতলা। বড় রাস্তা ছেড়ে গলি ধরলে কিছুটা ঢালাই। তারপর মাটি ও মোরামের রাস্তা। প্রায় দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর বাঁশঝাড়ের আড়ালে দরমা ও টিন দিয়ে ঘেরা কারখানা! তৈরি হচ্ছে চকলেট বোমা। আর তা ভরা হচ্ছে প্লাস্টিকের প্যাকেটে। হাত লাগিয়েছেন মহিলা। রয়েছে শিশুরাও।

Advertisement

এলাকার এক পরিচিতের সঙ্গে মোটরবাইকে পৌঁছনো গিয়েছিল ওই চকলেট কারখানায়। নিজেকে বাজির ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতে মুখ খুললেন মালিক। বললেন, ‘‘এক হাজার চকলেট। হাজার টাকা পড়বে। দু’হাজার নিলে ১৮০০ টাকা। ঠিকানা দিলে চকলেট পৌঁছে দিয়ে আসবে আমার ছেলেরা।’’

পুলিশ তো এবার খুব কড়াকড়ি করেছে শুনলাম। কারখানা-মালিক উত্তেজিত, ‘‘পুলিশের গাড়ি কোথায় টহলদারি দিচ্ছে, এখানে বসে আপনাকে বলে দেব। থানার গাড়ির পিছনে ছেলেরা মোটরবাইক নিয়ে নজরদারি করে। ছোট হাতি গাড়িতে চকলেট তুলে রেখে দিই। পুলিশের গাড়ি এদিক-ওদিক হলেই গাড়ি কলকাতায় রওনা দেয়। পুরো নেটওর্য়াক সাজিয়ে রেখেছি।’’

Advertisement

মহিলা এবং শিশুদেরও তো দেখা গেল চকলেট বোমা বানাতে। দুর্ঘটনা ঘটলে? মাথা নাড়লেন কারখানা-মালিক। বললেন, ‘‘এখানকার বাজিতে যদি আগুন না ধরে, তা হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই। আমার এখানে কাজ করতে হলে আগুন নিয়ে আসা যাবে না। মহিলা কারিগরদের বেশি পছন্দ করি। কারণ, ওদের বিড়ির নেশা নেই। যাদের নেশা আছে, তাদের বলা হয়েছে কারখানার এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে নেশা মিটিয়ে এসো।’’

এখানেই শেষ নয়। কারখানা-মালিক বলে চলেন, ‘‘এক সময় চোলাই তৈরি করা হত। বন্ধ হয়ে গেল। আমারও ভাটি বন্ধ। ওদেরও কাজ নেই। আমাদের কেউ কাজও দেয় না। তারপর কয়েক জন কারিগর নিয়ে নিয়ে চকলেট, আরও বোমা তৈরি শুরু করলাম। বছর পাঁচেক ধরে করছি। সবার বাড়িতে ভাতের হাঁড়ি উনুনে চড়ছে। এতেই খুশি হওয়া উচিত।’’ শুধু কালীতলা নয়, খড়িবেড়িয়া, শাঁখারিপোতা এলাকায়ও ছিল চোলাই মদের ভাটি। ২০১১-য় মগরাহাট বিষ মদ কাণ্ডের পর পুলিশি অভিযানে সে ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। বাঁশঝাড়ের আড়ালে দরমা-টিনে ঘিরে বেআইনি ভাবে শুরু হয়েছে বাজি তৈরি।

মহেশতলার বিধায়ক দুলাল দাসের ব্যাখ্যা, ‘‘মূল বিষয়টা চাহিদা। সকলে চকলেট বোমা কেনা বন্ধ করে দিলে, ওরা বিক্রি করতে পারত না। পুলিশও সক্রিয় হোক। আমিও নজর রাখছি।’’ আর ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ সুপার সেলভা মারুগানের বক্তব্য, ‘‘ওই সব এলাকায় কড়া নজরদারি রয়েছে। প্রতিটি কারখানায় তল্লাশি চালানো হবে। লাইসেন্স রয়েছে কি না, দেখা হবে। প্রয়োজনে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য থানায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement