রঙিন পাগড়িই তাঁর ক্যানসার ভয় জয়ের নিশান

বছর চল্লিশের সেই বর্ণালী বাগচি দেবনাথের সমর্থনে তাঁর চেনা ও অচেনা অজস্র নারী-পুরুষ মাথায় উজ্জ্বল পাগড়ি বেঁধে রাসের শোভাযাত্রায় নবদ্বীপের পথে হেঁটেছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪০
Share:

সাহসিনী: রাসের শোভাযাত্রায় বর্ণালী বাগচি দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র

রোগভয় জয়ের উদ্‌যাপনে পাগড়ি পরেছেন তিনি। কেমোথেরাপির পরে কেশশূন্য মাথায় বাহারি পাগড়ি বেঁধে ঘোষণা করেছেন, মৃত্যুকে এত সহজে কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না তিনি।

Advertisement

বছর চল্লিশের সেই বর্ণালী বাগচি দেবনাথের সমর্থনে তাঁর চেনা ও অচেনা অজস্র নারী-পুরুষ মাথায় উজ্জ্বল পাগড়ি বেঁধে রাসের শোভাযাত্রায় নবদ্বীপের পথে হেঁটেছেন। ক্যানসার-এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আতঙ্ক, মৃত্যুর ধারণাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার লড়াইয়ে তাঁরাও সহযোদ্ধা হয়েছেন, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, ক্যানসার-আক্রান্তের জন্য থাকুক সাহস আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। পাগড়ি সেই বার্তার বাহক।

বর্ণালী নদিয়ার স্বরূপনগরের মেয়ে, বিয়ে হয়েছে নবদ্বীপে। স্বামী সুজন আর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছেলে সত্যাগ্নিকে নিয়ে সংসার। গত ডিসেম্বরে হঠাৎ মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা অনুভব করেন। তার পরেই পুঁজ-রক্ত বের হতে শুরু করে সেখান থেকে। পরীক্ষার পর জানতে পারেন, ‘স্টেজ ফোর-ডি’ ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। কিন্তু সব শেষ ভেবে কান্নাকাটি করার মানুষ নন বর্ণালী। শেষ পর্যন্ত লড়ে রোগকে বুঝে নেবেন—এমন মানসিকতাতেই চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। সেই পর্বেই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা।

Advertisement

বর্ণালীর কথায়, ‘‘কলকাতার এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে এক চিকিৎসক কেমো শুরু করার আগে বার বার বলতে থাকলেন যে আমার লাস্ট স্টেজ। এই স্টেজ থেকে সচরাচর কেউ ফেরেন না। সবাই শুনে কাঁদতে কাঁদতে যান। আমি বড় জোর বছরখানেক বাঁচতে পারি। স্তম্ভিত হয়েছিলাম ওই আচরণে। একটা জেদও তৈরি হয়েছিল। ছোটবেলা থেকে কেউ আমাকে ভয় দেখালে আমার রোখ চেপে যেত। চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম বিষয়টা। ওই চিকিৎসককেও জানিয়ে এসেছিলাম, আমি এত তাড়াতাড়ি মরব না। সুস্থ হয়ে দেখাব।’’

কঠিন এক পর্ব শুরু হয়েছিল ৬টা কেমো নেওয়ার সময়ে। এত জ্বালা করত যে গায়ে জল দিতে পারতেন না। বর্ণালী বলেন, ‘‘ওই সময়ে স্বামী, শাশুড়ি মা, ছেলে, একাধিক চিকিৎসককে পাশে পেয়েছি। তেমনই পরিচিত অনেকে এমন হাবভাব করেছেন যেন শেষ দেখা দেখতে এসেছেন। শেষে তাঁদের আসতে বারণ করে দিয়েছিলাম।’’

দুর্গাপুজোর সময়ে কেমো শেষ হয়েছে তাঁর। ক্যানসারের মুখে ছাই দিয়ে আপাতত তিনি সুস্থ। পণ করেছেন, ক্যানসারের থেকে ‘ভয়’-এর ধারণাটা ছেঁটে, নিজেকে যথাসম্ভব ভাল রেখে চিকিৎসা চালিয়ে

যাওয়ার অভ্যাস গেঁথে দেবেন অন্য আরও আক্রান্তের ভিতরে। এই পথেই তো আগে হেঁটেছিলেন নবনীতা দেবসেন। কর্কট রোগ থামাতে পারেনি তাঁর লেখনী।

ক্যানসার চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায় নিজেও এখন ক্যানসারে আক্রান্ত। অন্যের চিকিৎসায় আগের মতোই ব্যস্ত। বলেছেন, ‘‘নিরন্তর মৃত্যুচর্চা অর্থহীন। ক্যানসার আক্রান্তকে তাঁর রোগটা নিশ্চয় জানাতে হবে। সেই সঙ্গে দিতে হবে সম্ভাবনার

বার্তা। লড়াইয়ের জন্য সেটাই

টোটকা। ক্যানসারের লড়াই ৬০ শতাংশই মনের জোর। তাতে ওষুধও ভাল কাজ করে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement