—গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তার পরেই রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সারা বাংলা জুড়ে যে নাগরিক আন্দোলন তৈরি হয়েছে, তার ঝাঁজ কি কিছুটা হলেও কমবে? এ ব্যাপারে সোমবার রাতের পর থেকে শাসকদলের নেতাদের আলোচনাতেই বিভিন্ন মতামত উঠতে শুরু করেছে। কারও মতে, আন্দোলনের ঝাঁজ এ বার কমে যাবে। কারও আবার বক্তব্য, এ সব ভাবা অর্থহীন। তৃণমূলের একটি অংশ অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের ৫ সেপ্টেম্বরের শুনানির দিকেও তাকিয়ে রয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘সন্দীপের গ্রেফতারির পরে আন্দোলনের ঝাঁজ আস্তে আস্তে কমবে। তার কারণ, এই পর্বে সন্দীপ হয়ে উঠেছিলেন ভিলেন। তাঁর গ্রেফতারির ফলে মানুষের রাগ অনেকটাই কমে যাবে।’’ তবে কলকাতার অন্য প্রান্তের এক প্রথম সারির নেতা আবার মনে করেন না এতে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার তো মনে হয়, এ বার আরও ঝাঁজ বেড়ে যাবে!’’ কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘যত দূর জানতে পারছি সন্দীপকে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করেছে। এ বার আদালতে সিবিআই রিপোর্ট দেবে। তাতে অনিবার্য ভাবেই এমন কিছু থাকবে যা তৃণমূলের পক্ষে যাবে না। ফলে মানুষের ক্ষোভ তাতে আরও উস্কে যেতে পারে। চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাতেও আর কেউ আছে কি না, তা নিয়ে আন্দোলন জারি থাকবে বলেই মনে হয়।’’ ওই নেতার আশঙ্কা, এই আন্দোলন ক্রমশ নাগরিক মোড়ক ছেড়ে রাজনৈতিক দিকে এগোবে।
তৃণমূলে তৃতীয় একটি মতও রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের একটি সাংগঠনিক জেলা সভাপতির বক্তব্য, ‘‘কালকেই হয়তো নাগরিক আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়বে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হল ৫ সেপ্টেম্বর। ওই দিন সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই কী বলে, আদালত কী নির্দেশ দেয়, তার উপরেও এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, মানুষ একটি ধারণা নির্মাণ করে ফেলেছেন। তার ভিত্তিতেই আন্দোলন করছেন। সেই ধারণা বদলের মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না সেটাই দেখার।
তৃণমূল সূত্রে খবর, সোমবার রাতে যখন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে সন্দীপকে বার করে নিজ়াম প্যালেসে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল, তখনই সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছ থেকে দলের মুখপাত্রদের কাছে বার্তা গিয়েছিল, এমন কোনও মন্তব্য যেন না করা হয়, যাতে নাগরিক ভাবাবেগে আঘাত লাগে। সন্দীপ গ্রেফতার হওয়ার অব্যবহিত পরেই তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘এ নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া সেই অর্থে কিছু নেই। তবে স্বাস্থ্য ভবন আগে পদক্ষেপ করলে এই পরিস্থিতিকে নেমন্তন্ন করে ডেকে আনতে হত না।’’
ঘটনাচক্রে, এই সন্দীপের বিরুদ্ধে ‘ফোঁস’ করেই তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ খোয়াতে হয়েছিল রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেনকে। সন্দীপ গ্রেফতারের পর তিনি বলেছেন, ‘‘ঈশ্বর বিচার করেছেন। আজ থেকে দেড় বছর আগে আমি ওঁর (সন্দীপের) দুর্নীতি ধরেছিলাম। চিঠি দিয়েছিলাম স্বাস্থ্যসচিবকে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। সেই ব্যবস্থা নেওয়া হলে আজকে এই দিন দেখতে হত না।’’
আরজি কর-কাণ্ডে মহিলাদের রাত দখল আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক রিমঝিম সিংহ অবশ্য মনে করেন না, সন্দীপের গ্রেফতারিতে আন্দোলন মিইয়ে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন। এক, আরজি কর-কাণ্ডের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন একই রকম ক্ষিপ্রতায় জারি থাকবে। দুই, মনন বদলের যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সেটাও চলবে।’’
একই ভাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও মনে করেন না, আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়বে। সেলিমের কথায়, ‘‘সন্দীপ তো দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশ যে নতুন নতুন কাহিনি তৈরি করেছে, তৃণমূল যে ভাবে গোটাটায় মদত দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও ধারালো হবে।’’ অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই আন্দোলন দমবে না। কারণ, আরজি করে আরও কারা ছিল, কাদের কারা আড়াল করার চেষ্টা চালাল, এই সবকিছু নিয়েই আন্দোলন চলবে।’’