সিপিএম যদি মনে করে কংগ্রেসের সঙ্গেই তারা পথ চলবে, তা হলে বামফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবা হোক। সিপিএমের রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে আলিমুদ্দিনকে এমন কড়া হঁশিয়ারির মুখে দাঁড় করিয়ে দিল বামফ্রন্টের শরিকেরা! চাপের মুখে শরিকদের মন রাখতে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও আপাতত এমন কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করে দিলেন, যেখানে কংগ্রেসকে আহ্বান জানানো হল না।
ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়ে বাম শরিকদের এ বার বহু আসন ছাড়তে হয়েছিল। ভোটেও প্রধান শরিকদের মধ্যে আরএসপি মাত্র তিনটি, ফরওয়ার্ড ব্লক দু’টি এবং সিপিআই একটি আসন জিতে কোনও ভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাওয়ায় শরিক নেতৃত্ব জোট-সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ বার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকের ঠিক আগে সুযোগ পেয়ে তিন শরিক দলের নেতৃত্ব শুক্রবার পরিকল্পনামাফিক একযোগে আক্রমণের তির শানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের দিকে। কিন্তু তিনি বৈঠকে না থাকায় বিমানবাবু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আরও দুই সদস্য মদন ঘোষ ও রবীন দেব চেষ্টা করেছেন আক্রমণ মোকাবিলার।
শরিকদের রণং দেহি মূর্তি দেখে বিমানবাবু আপাতত বামফ্রন্টের কর্মসূচি থেকে কংগ্রেসকে দূরে রাখার কৌশল নিলেও সূর্যবাবুরা কিন্তু মনোভাব বদলাননি। শরিকদের সঙ্গে রবীনবাবুদের বাদানুবাদের সময় সূর্যবাবু আলিমুদ্দিনেই ছিলেন। কিন্তু দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ফয়সালা হওয়ার আগে শরিক নেতাদের মুখোমুখি তিনি হননি। পরে রাতেই দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কলকাতায় পৌঁছে সূর্যবাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন। আলিমুদ্দিনে আজ, শনিবার থেকে রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন পলিটব্যুরোর আরও তিন সদস্য প্রকাশ কারাট, এম এ বেবি এবং বি রাঘবুলু। গণতান্ত্রিক জোট না হলে বিজেপি আরও মাথা তুলতো, এমন রিপোর্টই আজ কারাটদের উপস্থিতিতে পেশ করতে চলেছেন সূর্যবাবু।
আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফব-র নরেন চট্টোপাধ্যায় ও হাফিজ আলম সৈরানি এ দিন বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন, ভোটের আগে বলা হয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নয়, শুধু আসন সমঝোতা হচ্ছে। অসুবিধা হলেও তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সূর্যবাবু দলের সব বৈঠকে বলছেন, জোট থাকবে! তাঁরা দাবি করেন, বৈঠকে সূর্যবাবুকে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে। মঞ্জুবাবু সাফ জানিয়ে দেন, বামফ্রন্টকে অবহেলা করে সিপিএম কংগ্রেস-সঙ্গ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁরা সিপিএম-সংস্রব ত্যাগ করতে চান। মাঝে রবীনবাবু পাল্টা বলেন, কিছু আসন বেশি পেলে সাফল্যের ভাগ নিতে সবাই আসতেন। ফল খারাপ হয়েছে বলে দোষারোপে লেগেছেন!
পরে বিমানবাবু জানান, শাসক দলের সন্ত্রাস, মূল্যবৃদ্ধি বা বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিবাদে কর্মসূচি নিতে তাঁরা এসইউসি, লিবারেশন, পিডিএস-সহ বাম দলগুলির সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু কয়েক দিন আগেই সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ধর্মতলায় অবস্থান-বিক্ষোভে তো বাম-কংগ্রেস একসঙ্গে ছিল? বিমানবাবুর জবাব, ‘‘কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট তখন সব দলকে আহ্বান করেছিল। এতে আমরা কংগ্রেসকে ডাকছি না।’’