—ফাইল চিত্র।
১২ ঘণ্টা পর তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে বেরোল সিবিআইয়ের দল। মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুলের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে দু’টি ব্যাগ ছিল। আর ছিল লাল কাপড়ে মোড়া কিছু জিনিস। সিবিআই সূত্রে দাবি, বিধায়কের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থের একাংশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জাফিকুলের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। বিধায়ক বিধানসভার অধিবেশনের জন্য কলকাতায় ছিলেন। সিবিআই কর্তারা জাফিকুলের বাড়িতে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে বাড়ির গোটা চত্বর ঘিরে ফেলা হয়। এর পর দুপুর নাগাদ নিয়ে আসা হয় টাকা গোনার যন্ত্র। পরে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বিধায়কের বাড়ির শৌচাগারের লফ্ট থেকে সাত লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের ওই অংশের দাবি, জাফিকুলের ‘বেডরুম’ থেকেও প্রায় ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়াও বাড়ির অন্যান্য ঘর থেকে কয়েক লাখ টাকা মিলেছে। সব মিলিয়ে বিধায়কের বাড়ি থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলেই দাবি। যদিও এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের তরফে প্রকাশ্যে বা সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থের মধ্যে কতটা সিবিআই আধিকারিকেরা নিয়ে বেরিয়েছেন, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। সিবিআই কর্তারাও এখনও সে ব্যাপারে কিছু জানাননি।
নগদ অর্থ ছাড়াও গোয়েন্দাদের হাতে দু’টি ব্যাগ ছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, তাতে প্রচুর নথি ছিল। তার মধ্যে রয়েছে জাফিকুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্কের নথি, বাড়ির দলিল। তদন্তকারীদের একটি সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, জাফিকুলের স্ত্রী বীণা সরকারের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু সোনার গয়নার হদিস মিলেছে। ওই সূত্রের দাবি, বীণা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, কলেজের অধ্যক্ষা হিসেবে তিনি যে বেতন পান, সেখান থেকেই এই সোনা কেনা। যদিও সেই সংক্রান্ত কোনও নথি এখনও তিনি দেখাতে পারেননি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে লাল কাপড়ে মোড়া যে জিনিস দেখা গিয়েছে, তা ‘বাজেয়াপ্ত’ হওয়া গয়না বলেই মনে করা হচ্ছে। সিবিআই সূত্রে খবর, এ ছাড়াও দু’টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তবে বিধায়কের পরিবার সূত্রে খবর, সম্প্রতি কিছু সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। সেই টাকাই তাঁর বাড়িতে ছিল। এ ছাড়াও বিধায়কের বিএড কলেজের বিভিন্ন কর্মচারীদের বেতন বাবদ কিছু টাকা বাড়িতে ছিল। উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগ টাকার উৎসের হিসাব রয়েছে তাদের কাছে। পরিবার সূত্রে দাবি, উদ্ধার হওয়া কিছু টাকার নথি জাফিকুলের ভাই জাহাঙ্গির বিশ্বাসের ছেলে মেহবুব আলমের কাছে রয়েছে। এর পর তদন্তকারীরা মেহবুবের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। মেহবুবও কিছু নথি নিয়ে তদন্তকারীদের সামনে হাজির হন। পরিবার সূত্রে খবর, সেই সব নথিও খতিয়ে দেখেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। প্রসঙ্গত, মেহবুব তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ।
দলীয় বিধায়কের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। এ ব্যাপারে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও কোনও সূত্রে বলা হচ্ছে, জাফিকুলের বাড়ি থেকে টাকা পাওয়া গিয়েছে। সেই টাকা বৈধ না অবৈধ, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। যদি ব্যবসার টাকা হয়, তা হলে তার বৈধতা নিয়ে কার কী বলার আছে? আর যদি অবৈধ হয়, তা হলে দলের অবস্থান আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন— জ়িরো টলারেন্স।’’
রাজ্যের আরও কয়েকটি জায়গায় বৃহস্পতিবার সকালে হানা দিয়েছিল সিবিআই। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সী তথা বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তী এবং কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের বাড়ি। দেবরাজের দু’টি বাড়িতে যান তাঁরা। তবে দুপুর ৩টের মধ্যে ওই দু’টি ঠিকানা থেকে বেরিয়ে যায় সিবিআই। বাপ্পাদিত্যের বাড়ি থেকেও দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ বেরিয়ে যান তদন্তকারীরা।