প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন পঠনপাঠনের কমবেশি ব্যবস্থা হলেও অন্যান্য কারণের পাশাপাশি মূলত পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবে সেই সুযোগ সর্বস্তরের পড়ুয়ার কাছে পৌঁছয়নি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস মনে করেন, অনলাইনে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে গেলে সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামোর আরও উন্নতি দরকার। নইলে শিক্ষায় বৈষম্য বাড়বে।
বৈষম্য কী ভাবে বাড়তে পারে, অতিমারি তা দেখিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন শহরাঞ্চলের সঙ্গতিসম্পন্ন পড়ুয়ারা অনলাইন-পাঠের সুবিধা ভোগ করলেও গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা তা থেকে বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন পরিকাঠামোর দুর্বলতায়, অর্থাভাবের কারণেও। বুধবার বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিতকোভিড-পরবর্তী শিক্ষা নিয়ে এক আলোচনাসভায় সুরঞ্জনবাবু ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বা সাইবার-বিভেদের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই এ দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা বৈষম্য রয়েছে। অনলাইন পঠনপাঠনের পরিকাঠামো উন্নত করতে না-পারলে সেই বৈষম্য আরও বাড়বে। শিক্ষকদের আরও দায়িত্ব নিয়ে অনলাইন ক্লাস করাতে হবে।’’ অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র বিক্ষোভের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, শিক্ষকদের এমন ভাবে অনলাইন ক্লাস করতে হবে, যাতে পড়ুয়ারা উৎসাহিত হয়।
পরিসংখ্যান দিয়ে সুরঞ্জনবাবু জানান, দেশে ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রামে এখনও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। কমবেশি ৩৪ হাজার ছাত্রছাত্রী নিয়ে কিছু দিন আগে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাদের ২৭ শতাংশের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছয়নি। এমনকি অনলাইন পড়াশোনার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য আছে বলেও মন্তব্য করেন যাদবপুরের উপাচার্য। দেখা গিয়েছে, একটি বাড়িতে যদি একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে থাকে, তা হলে মেয়েটির আগে ছেলেটি ইন্টারনেটে পড়াশোনা করার সুযোগ বেশি পাচ্ছে।
করোনার সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে বলেও মনে করেন উপাচার্য। উদাহরণ দিয়ে তিনি এ দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা কোভিডের সময় কম বাজেটের ভেন্টিলেশন তৈরি করেছেন। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় সেটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সেই মেশিন পেন্টেন্টও পেয়ে গিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যক্ষ ডোমিনিক স্যাভিও জানান, করোনার সময় তাঁদের কলেজে অনলাইনে ভর্তি থেকে পড়াশোনা সবই নির্বিঘ্নে হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, কোভিড-পরবর্তী অনলাইন পড়াশোনা একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে সকলকে।
রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট)-এর উপাচার্য সৈকত মৈত্র আলোচনাসভায় বলেন, ‘‘কোভিডের পরে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন আরও দরকার। ভবিষ্যতে অনলাইন পঠনপাঠনের গুরুত্ব আরও বাড়বে।’’