জয়নগরের পথে বাধা কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলকে। —নিজস্ব চিত্র।
ওঁদের গ্রামের দোরগোড়া পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার সময়ে কিছু ত্রিপল দিয়েছিল সিপিএম। প্রাথমিক ভাবে, পোড়া বাড়ির চাল ছাইতে সেই ত্রিপলই কেউ কেউ কাজে লাগিয়েছেন। ঘটনার পাঁচ দিন পরে, অবশেষে জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে পৌঁছল প্রশাসনের সাহায্যের জামা-কাপড়, ত্রিপল-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। জয়নগর-১ ব্লক প্রশাসনের তরফে শুক্রবার একটি দল এই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দলুয়াখাকিতে যায়। যদিও সিপিএমের নেতৃত্ব এবং আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর মতো এ দিন কংগ্রেস প্রতিনিধিদলকেও এলাকায় ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
গত সোমবার বামনগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুনের পরে দলুয়াখাকিতে অনেকগুলি বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ধানের গোলা থেকে জামা-কাপড়, মোটর ভ্যান সব কিছুতেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি। এলাকার মহিলা-শিশুরা দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে এলাকায় ফেরেন। সিপিএমের তরফে কিছু ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। তবে প্রশাসনের তরফে এত দিন কিছু মেলেনি। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে জামা-কাপড়, ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপল হাতে পেয়ে অনেককেই দেখা যায় ভাঙা চাল সংস্কারের চেষ্টা করতে। গ্রামে এ দিন দেখা মিলেছে কিছু পুরুষেরও। তাঁরা জানান, খুনের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছিলেন। অনেক বাড়িতে চার দিন পর এ দিনই রান্না চেপেছে। আবেদা বিবি নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘উনুন ভেঙে দিয়েছিল। তাই নতুন হাঁড়ি-কড়া দেওয়া হলেও রান্না করতে পারছিলাম না। গত কালই নতুন উনুন গড়েছি। আজ কিছুটা শুকোতে রান্না শুরু করেছি।’’
প্রশাসনের লোকজন গ্রামে ঢুকলেও দলুয়াখাকি যাওয়ার পথে এ দিন আটকে দেওয়া হয় কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলকে। এর আগে সিপিএমের প্রতিনিধিদল, নওসাদকেও এলাকায় ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২) জেলা কংগ্রেসের তরফে পুলিশ-প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’র প্রতিবাদে এ দিন বামনগাছি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আক্রান্ত এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র, প্রদেশ কংগ্রেসের সৌম্য আইচ রায়, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, সুমন রায় চৌধুরী, সৌমেন বিশ্বাস, জেলা সভাপতি জয়ন্ত দাস প্রমুখ, জেলা সম্পাদক সুজিত পাটোয়ারি প্রমুখ। রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলের কাছে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধস্তাধস্তিও হয় তাঁদের। রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্যের বক্তব্য, ‘‘আমরা বিপন্ন মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কংগ্রেস কর্মীদের ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে পুলিশ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ভাবে আটকে দিয়েছে।’’ জেলা সভাপতি জয়ন্ত বলেন, ‘‘পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম, দু’জন প্রতিনিধিকে ত্রাণ সামগ্রীগুলো দিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হোক। তাও শোনা হয়নি।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, স্থানীয় নেতৃত্বের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়ে আসা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআর-এর তিন সদস্যের এক প্রতিনিধিদল এ দিন সকালে গ্রামে পৌঁছেছিল। তবে অভিযোগ, খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের দ্রুত সরিয়ে দেয়। বারুইপুর পুলিশ জেলার এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস জানান, নিরাপত্তার স্বার্থেই বাইরের কাউকেই এখন গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও শাসক দল তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘কখনও সিপিএম, কখনও কংগ্রেস, কখনও বিজেপি। আসলে এটা একটা অশুভ রাজনৈতিক ককটেল! গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামেই থাকবেন। পুলিশ শান্তিরক্ষায় যা ভাল বুঝবে, তা করবে।’’ জয়নগর-কাণ্ডে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবিতে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপারের দফতরের সামনে এ দিন বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থেকেরাও। সুপারের দফতরে দাবিপত্র দেওয়া হয়।